ইসমাঈল হুসাইন ইমু: সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কটি জঙ্গি আস্তানা থেকে যেসব গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো হাতে তৈরি। গোয়েন্দাদের ধারণা, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ জঙ্গিরা এসব ঘরে বসেই তৈরি করে তা বড় ধরনের হামলার জন্য মজুদ করেছিল। এসব গ্রেনেড কারিগরদের খোঁজে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলেছেন, আশকোনা থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের মধ্যে ফিরোজ, সুমন ও সেলিম, যে কেউ একজন গ্রেনেড তৈরির দক্ষ কারিগর। আশকোনার আস্তানায় বসে এসব গ্রেনেড তৈরি করা হয়েছে। তবে তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দলের অন্য কেউ এ গ্রেনেড তৈরি করতে পারে।
গোয়েন্দারা আরও জানান, শুধু আশকোনাতেই নয়, অন্যান্য আস্তানাতেও জঙ্গিরা এ ধরনের গ্রেনেড তৈরি করে তা মজুদ করতে পারে, যা তাদের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বিক্ষিপ্তভাবে সংগ্রহ করে ঘরে গ্রেনেড তৈরি করা হলে তা ঠেকানো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে সত্যিকার অর্থেই অত্যন্ত কঠিন হবে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কাশিমপুর থেকে আদালতে নেওয়ার পথে ময়মনসিংহের ত্রিশালে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি, রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ও যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। এরপর সানি ও মিজান প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে রাকিবুল। সানি ও বোমারু মিজানের অবর্তমানে সংগঠন পরিচালনা করেন তামিম চৌধুরী। জঙ্গি কর্মকা-ের মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর নব্য জেএমবির হাল ধরেছিলেন তানভীর কাদেরী। আজিমপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সেও মারা যায়। এরপর আশুলিয়ায় র্যাবের অভিযানে মারা যায় আরেক শীর্ষ জঙ্গি সারোয়ার জাহান। ভারতে পালিয়ে যায় শীর্ষ জঙ্গি মামুনুর রশিদ রিপন। তবে নূরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান চকলেট ও রাজীব গান্ধী দেশেই লুকিয়ে আছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। ডিএমপির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, মুসার সঙ্গে সোহেল মাহফুজের যোগাযোগের তথ্য তারা পেয়েছেন। আর তা থেকে তারা সন্দেহ করছেন, তার মাধ্যমে অস্ত্র-বিস্ফোরকের চালান প্রতিবেশী দেশ থেকে পাচার করেছিলেন মুসা। যা তিনি আশকোনার আস্তানায় মজুদ করেন এবং পরে ওই বিস্ফোরক দিয়েই হাতে গ্রেনেড তৈরি করা হয়।
কাউন্টার টেরোরিজম কর্মকর্তারা বলেছেন, গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাসহ নব্য জেএমবির নেতৃত্বে বিভিন্ন হামলায় এই সোহেল মাহফুজ অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহ করেছিল। পরে গুলশান হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ তামিমসহ শীর্ষ নেতারা নিহত হন। এরপর নব্য জেএমবির হাল ধরে মাইনুল ইসলাম ওরফে মুসা ওরফে আবু মুসা। রাশেদুর রহমান ওরফে সুমন, ফিরোজ ও সেলিম নামে তিন সঙ্গীকে নিয়ে আবারও বড় হামলার পরিকল্পনা করেন তিনি।
সম্পাদনা: আমিনুর রহমান তাজ