বর্তমান মেয়াদে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার
সাইদ রিপন: বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে তিন বছরে চোখে পড়ার মতো ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যয় ও সবচেয়ে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে গত কয়েক বছরে। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) গ্রহণে নজির সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যা বর্তমানে শেষ হয়েছে। এখন চলছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এসব পরিকল্পনার উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা এবং দারিদ্র্যের হার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। সরকারের দক্ষ সামষ্টিক ব্যবস্থাপনার ফলে আশা করছি ২০২১ সালের মধ্যে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। কেননা গত তিন বছরে প্রবৃদ্ধির হার সর্বাধিক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার প্রত্যাশা করছে, ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানো সম্ভব হবে। কেননা গত তিনবছরে তার ভিত্তি তৈরি হয়েছে। এখনই ১৫ হাজার ২৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া মূল্যস্ফীতিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। প্রতিবেশী ও সমমানের রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অভূতপূর্ব সাফল্য বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, গত অর্থবছরের এডিপি বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত জুন মাসে সমাপ্ত হওয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩৫টি। এ সময় উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় ২৭৮টি। এগুলোর ব্যয় ছিল ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৪৯ কোটি ৬৭ হাজার টাকা। এ অর্থবছরে মোট এডিপির আকার ছিল ৯৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৮৬ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে ২৫৪টি। এডিপি বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ৯৩ শতাংশ।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩১টি। এর মধ্যে ২১২টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ৭৭ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছিল ৭১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরে ২৮০টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে। এডিপি বাস্তবায়ন হার হয়েছিল ৯১ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সূত্র জানায়, গত তিন বছরে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন সময় এসেছে প্রকল্পের সঠিক ও গুণগতমান বাস্তবায়নের দিকে নজর দেওয়ার। কেননা ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আমাদের এটা করতেই হবে।
মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনের রাস্তা। বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে নভেম্বর পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৮ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, যেভাবে বাস্তবায়ন কার্যক্রম এগিয়ে চলছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ সমাপ্ত হবে। এছাড়া গত তিন বছরে বাস্তবায়নের দিকে অনেকখানি এগিয়ে নেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল, রূপপুর পরামাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। এগুলোর বাইরে স্বপ্ন জাগানো আরও বেশকিছু প্রকল্প অনুমোদন, কাজের উদ্বোধন কিংবা সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। সম্পাদনা: এনামুল হক