হত্যার মোটিভ এখনো অস্পষ্ট এমপি লিটন হত্যায় জঙ্গিরা জড়িত বলে সন্দেহ
আমিনুর রহমান তাজ ও রফিকুল ইসলাম: গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সরকারদলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় জঙ্গিরা জড়িত বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। হত্যার ধরন দেখে তাই মনে করছেন পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তারা। ঢাকার গুলশানে ইতালির নাগরিক তাবেল্লা সিজার, রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি ও ঢাকার কলাবাগানে আমেরিকান দূতাবাসের প্রটোকল অফিসার জুলহাস মান্নান হত্যাকা-ের সঙ্গে এমপি লিটনের হত্যাকা-ের অনেকটাই মিল খুঁজে পেয়েছেন তারা। এ সকল হত্যাকা-ে জঙ্গিরা মোটরসাইকেল ও ছোট আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিল। তবে জামায়াত-শিবির, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও পারিবারিক ও রাজনৈতিক শত্রুতা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়গুলোকে তদন্তে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত এমপি লিটনের খুনিদের শনাক্ত করা যায়নি। কি কারণে লিটনকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনো অস্পষ্ট। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হত্যাকা-ের পরপরই ১৮ জনকে আটক করেছে। পুলিশ হেফাজতে এদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই গাইবান্ধা জেলার বামনডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা এবং জামায়াত-শিবিরের সমর্থক বলে জানা গেছে। সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আতিয়ার রহমান জানান, ‘এই খুনের সাথে জড়িত থাকার দায়ে শনিবার রাতে ৬ জন এবং রোববার আরও ১২ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তবে গোপনীয়তার স্বার্থে আমরা তাদের নাম প্রকাশ করছি না’। গতকাল বিকালে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধা জেলার পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, হত্যাকা-ে জড়িতদের সনাক্ত করতে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দাদের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। এদিকে এমপি লিটন হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ, র্যাব ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে নেমেছে। হত্যাকা-ের প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজনের সঙ্গে পুলিশ কথা বলে হত্যাকারীদের চেহারার আকৃতি সম্পর্কে ধারণা নিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এই হত্যাকা-ের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে জামায়াত-শিবিরকে সন্দেহ করছেন। এমপি লিটন হত্যার মিশনে কতজন খুনি অংশ নিয়েছিল তা এখনো স্পষ্ট নয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে খুনির সংখ্যা নিয়ে নানারকম বক্তব্য রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, কিলিং মিশনে মোট ৩ জন খুনি অংশ নিয়েছিল। এরা মোটরসাইকেলযোগে এমপির শাহবাজ এলাকায় এমপির বাড়িতে আসে। খুনিদের প্রত্যেকেই হেলমেট পরিহিত অবস্থায় ছিল যাতে তাদের মুখম-ল চেনা না যায়। এরা প্রত্যেকেই সশস্ত্র ছিল। পুলিশের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, কিলিং মিশনে ৫ জন খুনি অংশগ্রহণ করেছিল। এরা সকলেই বহিরাগত। খুনিদের পরনে ছিল কালো কোট-প্যান্ট। প্রত্যেকের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এদের একজনের মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি ছিল। তারা দুটো মোটরসাইকেলে করে এসে বিকাল ৪টা থেকে এমপি লিটনের বাড়ি এবং আশপাশের এলাকায় রেকি করে। পরে তারা এমপি লিটনের বাড়িতে প্রবেশ করে। দুটি মোটরসাইকেলে ৫ জন কিলার এলেও বাকি তিনজন মোটরসাইকেলের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে। কিলিং মিশন শেষ করে তারা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। একটি মোটরসাইকেল যায় পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে বামনডাঙ্গার দিকে এবং অপরটি পশ্চিম দিকে নলডাঙ্গার রাস্তায় চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, খুব কাছ থেকে খুনিরা এমপিকে লক্ষ্য করে তিন থেকে পাঁচ রাউন্ড গুলি করে। হত্যাকা-ে একাধিক ছোট আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। কি কারণে এমপি লিটন খুন হতে পারেন তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন তদন্তের সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা। এলাকাটি জামায়াত অধ্যুষিত হওয়ায় সন্দেহের তীর জামায়াত-শিবিরের দিকেই। তদুপরি এমপি লিটন তার নিজ এলাকায় জামায়াত-শিবির, যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। হত্যাকা-ের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের পাশাপাশি জঙ্গিদের জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। তদন্তকারী পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ হত্যার মোটিভ নির্ণয়ে ৫টি সম্ভাব্য বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হলো, জঙ্গিদের টার্গেট, জামায়াত-শিবির চক্রের হামলা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, পারিবারিক শত্রুতা এবং সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচন। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন