আশুলিয়ায় আলোচনার মাঝপথেই কারখানা বন্ধ করে দেন মালিকরা
জাফর আহমদ: শ্রমিক ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলার মধ্যেই আশুলিয়ায় কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল গার্মেন্ট মালিকরাÑ এই অভিযোগ আশুলিয়ার গার্মেন্ট শ্রমিকদের। অন্যদিকে মালিকরা বলেছেন, শ্রমিক, প্রশাসন ও মালিক এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরও শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করায় আশুলিয়ায় কারখানা বন্ধ করা হয়েছিল।
আশুলিয়ার শ্রমিক নেতা গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগাঠনিক সম্পাদক কেএম মিন্টু বলেন, ২০ তারিখ সন্ধ্যার পর যখন বিজিএমইএ কারখানা বন্ধ করে দেয়, তখনো প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা শ্রমিকদের কারখানায় যোগদান ও শান্তভাবে কাজে যোগদান করার অনুরোধ করেছিলাম।
আমরা শ্রমিকদের বাড়িভাতা বৃদ্ধি না হওয়া ও বেতন বৃদ্ধিতে সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের কথা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। তিনি জানান, ১৭ ডিসেম্বর থেকে আমরা তিন দফায় মন্ত্রী, স্থানীয় প্রশাসন ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করি। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত পরের দিন শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানোর সময়েই কারখানা বন্ধ করে দেয় মালিক পক্ষ। গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, আশুলিয়ার মজুরির বৃদ্ধির আন্দোলন দমনকে অমালিক সুলভ, দেশপ্রেমহীন ও অপরিণত চিন্তার পরিচায়ক।
তিনি বলেন, তাজরীন ও আশুলিয়ার গার্মেন্টস কারখানা দুর্ঘটনার পর মালিক পক্ষ ও সরকার পক্ষ দেশে-বিদেশে বলে বেড়াচ্ছিল দেশে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নের রীতি-নীতি হলো শ্রমিক-মালিক আলোচনার ভিত্তিতে সমঝোতার পরিবেশে উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখা। কিন্তু সে পথে না গিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার মতো হঠকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মামলা-হামলা করে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করে রাখা কোনো অবস্থাতেই সুফল বয়ে আনবে না। অথচ শ্রমিকরা মজুরির বৃদ্ধির আন্দোলন করলেও কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেনি। এ বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করার কোনো সুযোগ ছিল না। দ্বিপাক্ষিক ও ত্রিপাক্ষিক আলোচনার পরও শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেনি। তারা কার্ডপাঞ্জ করে হাজিরা দিয়ে চলে যাচ্ছিল। এ কারণে শিপমেন্ট নিয়ে সমস্যায় পড়ছিলাম। এই সমস্যা থেকে উত্তরণে কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। আশুলিয়ার মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন নিয়ে সরকারের শরিক দলগুলোর মধ্যেই অস্বস্তি বিরাজ রয়েছে। শুক্রবার এক শ্রমিক সমাবেশে নৌমন্ত্রী শাহাজান খান বলেন, আন্দোলনের আগে শ্রমিকরা কোনো দাবিনামা দেয়নি। একই অনুষ্ঠানে অপর শরিক দল কমিউনিস্ট কেন্দ্রের নেতা প্রবীণ শ্রমিক নেতা ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, মন্ত্রীর কথা ঠিক নয়। শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিনামা পেশ করেছে, জীবন নির্বাহের ব্যয় বেড়েছে, সে কথা জানিয়েছে। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য আন্দোলনে নেমেছে। এতে মালিকরা শ্রমিকবিরোধী অবস্থান নিয়ে একতরফাভাবে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে।
একই অনুষ্ঠানে আশুলিয়ার শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি ও মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, আশুলিয়ার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মালিকরা বাড়াবাড়ি করেছে। মন্ত্রী-এমপিদের বেতন বেড়েছে, কেন শ্রমিকদের মজুরি বাড়বে না? কারখানা বন্ধ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছে এবং ফিরে এসে কারখানা খুলে দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত