ইমরান-নন্দিতার বিয়ে এবং হজরত শাহজালালের (রা.) পবিত্র জায়নামাজ!
হুমায়ুন আইয়ুব: ঘর বেঁধেছেন ইমরান এইচ সরকার ও নন্দিতা ইসলাম। ইমরান পেশায় একজন ডাক্তার হলেও পরিচিতি পেয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চে। সিলেটের মেয়ে নন্দিতা একজন শিক্ষক। খবরে প্রকাশ তারা ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে বিয়ে করেছেন। দোয়া-দরুদের মাধমেই সম্পন্ন হয়েছে তাদের শুভ বিয়ে। বর ইমরান রাতে এশার নামাজও পড়েছেন বধূবাড়িতে। বিয়ে, দোয়া-দরুদ বা অনুষ্ঠানের বিষয়ের সংবাদগুলো অনেকে খুব অবাক চোখে পড়ছেন। অনেকে শাহবাগ-শাপলার আন্দোলনের ইতিহাস ঘিরে খোঁচাও দিচ্ছেন।
প্রথম কথা হলো, ইমরান-নন্দিতার এই বিয়ে একান্তই ব্যক্তিগত। তবুও গণজাগরণ মঞ্চ ও হেফাজতে ইসলামের শাপলার আন্দোলন এখানে খুব মুখ্য নয়। আস্তিক-নাস্তিক প্রসঙ্গ নয়, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই, ইমরান এইচ সরকার গণজাগরণ মঞ্চে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাহলে প্রথমকথা হলো- ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া ইমরান কি বিয়ে করবে না? বিয়ে করলে কী ইসলামি রীতিনীতি মেনে করবে না? শুধু বিয়ের রাতের নামাজই কেন নিউজ হবে? তিনি যদি গণজাগরণ মঞ্চে ভুলও করে থাকেন তার জন্য কী ইসলাম মানা, পালন করা বা যাপিত জীবনে বাস্তবায়ন করা অন্যায় হয়ে যাবে?
তর্কে জড়াতে চাই না, তর্কের পরাজয় মেনেই ইসলামের সোনালী দিনের কয়েকটি উদাহারণ তুলে ধরতে চাই, মক্কার তায়েফের মাটি যখন মহানবী (সা.) রক্তে ভিজছে, আঘাতে আঘাতে প্রায় বেহুঁশ হজরত মুহাম্মদ (সা.)। রক্তভেজা নবীর গা-গতর। তখন মানবতার নবীর স্পষ্ট উচ্চারণ ছিল- ওগো ফেরেশতারা তোমরা তায়েফের দুই পাশের পাহাড়গুলো দিয়ে আমার তায়েফবাসীকে পিশে দিও না। ওদের মেরে ফেল না। ওরা বুঝে না। ওরা হয়তো ইমানও আনবে না। তবে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমার দ্বীনের ছায়াতলে আসবে। ইসলামের পতাকা উড়াবে। আজ কী তায়েফের মাটিতে ইসলামের বিজয় আসেনি?
বাংলার আধ্যাত্মিক রাজধানী হজরত শাহজালাল (রা.)-এর পবিত্রভূমির উত্তরাধিকার হয়ে ওঠছেন ইমরান এইচ সরকার। তার প্রজন্মও হজরত শাহজালাল (রা.)-এর পবিত্র জায়নামাজরে ছোঁয়ায় ইসলামের পতাকাবাহী হয়ে উঠতে পারে। আরও একটু বলি, মানবতার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চাচা হামজা (রা.)। উহুদের যুদ্ধে চাচা হামজাকে হত্যা করেছেন ওয়াহশি। নবীর চাচার হত্যাকারী সেই ওয়াহশিও একদিন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
সেই ওয়াহশিই ইয়ামামার যুদ্ধে ভ-নবীর দাবিদার মুসাইলিমাতুল কাজ্জাবকে হত্যা করেন। এছাড়াও ওয়াহশি (রা.) ইসলামের নানা কাজে এসেছে।
আবু সুফইয়ানের স্ত্রী হিন্দা বিনত উতবা উহুদের প্রান্তরে নবীজির চাচা হজরত হামজার (রা) কলিজা চিবিয়ে খেয়েছেন। চাচা হজরত হামজার (রা.) নাক কান কেটে ফূর্তি করেছেন। মহান আল্লাহ তাকেও হেদায়াত দিয়েছেন। সেও নবীজির ভালবাসা পেয়ে ইমানের মূল্যবান বাগানে প্রবেশ করেছে।
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রকাশ্যশত্রু আবু জাহেলের ছেলে ইকরামা। পালিয়ে গিয়েও রেহাই পাননি। মানবতার নবীর দয়ার পরশ পেয়ে ইমানের ছায়ায় এসেছেন। হেদায়াত পাওয়ার এই যে উপমা তা কিন্তু শুধু সেই সময়ের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। যুগযুগান্ত, কালের পর কাল এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। আজও আছে। সুতরাং, একজন ইমরান এইচ সরকার সিলেটের মেয়ে নন্দিতা ইসলামকে বিয়ে করে বাংলার আধ্যাত্মিক রাজধানী হজরত শাহজালাল (রা.)-এর পবিত্রভূমির উত্তরাধিকার হয়ে উঠছেন। তার জন্য ইমান-ইসলামের সৌরভময় পথ অবারিত আছে ও থাকবে। হজরত শাহজালালের পবিত্র জায়নামাজের ছোঁয়ায় আলোকিত হয়ে উঠুক তাদের জীবন সংসার। জীবনের ফুলবাগানে বয়ে বেড়াক অংসখ্য মৌমাছি। ইমানের সৌরভিত পাখিরা গেয়ে যাক বেলালি সুর। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম