হকার মুক্ত ও ক্লিন ঢাকা করতে পারেননি মেয়র খোকন
একে আজাদ: ক্লিন ঢাকা ও হকার মুক্ত ঢাকা ছিল মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের অন্যতম প্রতিশ্রুতি। এমনকি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনেক ওয়ার্ড কমিশনার মেয়র খোকনের এ প্রতিশ্রুতিকে বলেছেন অপারেশন কিøন ঢাকা। কিন্তু ঢাকা শহরের কোনো স্থানকেই পুরোপুরি হকার মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করতে পারেননি মেয়র খোকন। এমনটাই জানিয়েছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।
সেগুন বাগিচা এলাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ী(নাম প্রকাশ না করে) জানান,আগের মতোই ঢাকার ময়লা আবর্জনা রয়েছে। গুলিস্তান এলাকা হকারমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এমনকি অনেক রাস্তার পাশের দোকানের চাঁদা আদায় ওয়ার্ড কমিশনারদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে একধাপ এগিয়েছেন তিনি। কিছু সড়কের হলিডে মার্কেট পুলিশের তত্ত্বাবধানে ছিল কিন্তু এসব মার্কেটের দায়িত্ব তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার কমিশনার ও তাদের দলীয় লোকদের মধ্যে বন্টন করেছেন।
২০১৬ সালে মেয়র খোকনের অন্যতম কাজ ছিল, পরিচ্ছন্ন অভিযান, গুলিস্তান এলাকা হকারমুক্ত করা,সব মুক্তিযোদ্ধার হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ, হকারমুক্ত ফুটপাথ ও বিভিন্ন রাস্তায় দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি। ২০১৬ সালে ক্লিন ঢাকা গড়ার নামে মেয়র খোকনের সেলিব্রেটিদের নিয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মসূচিকে নাটক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন নগরবাসী। প্রধান বিচারপতি এসকে সিন্হা, এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, রাজউকের চেয়ারম্যানকে নিয়ে পৃথক অনুষ্ঠান করা হয়। বাস্তবে ময়লা আবর্জনা আর ধূলাবালির কারণে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতেই হচ্ছে। কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, লালবাগ, শহীদনগর, পোস্তা ও শ্যামবাজারসহ ঢাকা দক্ষিণের অনেক এলাকায় এখনো পরিচ্ছন্নতার ছোঁয়া লাগেনি।
কামরাঙ্গীরচর এলাকার ৫৫ ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল করিম জানান, ময়লা ফেলার জন্য আগে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট ডাস্টবিন দিতে হবে, তাহলে ঠিকমতো নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে। এখানে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন নেই, কিন্তু ছোট ময়লার ডিব্বা(ওয়েস্টবিন) দেওয়া হয়েছে তাই বাড়িওয়ালারা এগুলোতে ময়লা রাখে। তাছাড়া এই এলাকায় কখনো ঝাড়ু দেওয়া হয় না, কোনো রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করা হয় না।
এছাড়া মেয়র সাঈদ খোকনের নাম লিখা ৫ হাজার ৭০০টি ওয়েস্টবিন নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৪ কোটি টাকার এই প্রকল্প তেমন কাজে আসেনি এমনটাই মনে করেন জনপ্রতিনিধিরাও।
এ বিষয়ে অঞ্চল তিন এর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার হুমাউন কবির জানান, সিটি করপোরেশন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ট্যাক্স নেয়, তাই প্রতিটি এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখা তাদের দায়িত্ব । মেয়র সাঈদ খোকন সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতা নিয়ে ঢাকাকে ক্লিন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে মেয়র কিম্বা পাঁচ হাজার ক্লিনার চাইলেই ঢাকা শহরকে পরিচ্ছন্ন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, এক্ষেত্রে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে । তাছাড়া ওয়েস্টবিন ব্যবহার করার বিষয়ে এলাকাবাসিকে সচেতন করতে হবে। বাসাবাড়ির ময়লা ফেলার কারণে বিনগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এগুলোর যথাযথ ব্যবহার করা যায়নি।
হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন করার জন্য মেয়র খোকন রাস্তা বা ফুটপাথে হকার মুক্ত করার উদ্যোগ নেন। ২৭ অক্টোবর গুলিস্তানে হকারদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের নেতা সাব্বির হোসেন ও ওয়ারী থানা ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমানকে গুলি ছুঁড়তে দেখা যায়। পরে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা করাসহ তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু গুলিস্তান এলাকায় হকাররা আগের মতোই অবস্থান করছে।