নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ব্যাপারেরাষ্ট্রপতির সঙ্গে জামায়াত সংলাপে বসার সুযোগ পাচ্ছে না
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও এই লক্ষ্যে গঠিত বাছাই কমিটি করতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। এই জন্য তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসছেন। এখনও সরকারি দলের সঙ্গে না বসলেও সংলাপের শেষ দিনে রাষ্ট্রপতি সরকারি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এই ব্যাপারে সরকারি দল রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরতে পারে। ইতোমধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, এলডিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করে তারা তাদের প্রস্তাব দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাদের প্রস্তাব শুনেছেন ও এনিয়ে আলোচনা করেছেন।
এদিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসার বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও কমিশনকে শক্তিশালীকরণ ও সার্চ কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে প্রস্তাব সংবাদ সম্মেলনে ও পরে রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করেছেন সেখানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এমন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করার কথাও বলেছেন। বিএনপির সূত্র জানায়, জামায়াতের কথা তিনি বোঝালেও সেটা স্পষ্ট করে বলেননি। তার উপর জামায়াত ছাড়ার চাপ রয়েছে। এই অবস্থায় তিনি অনেক দিন ধরেই জামায়াতের সঙ্গে বাহ্যিকভাবে দূরত্ব বজায় রাখছেন। তবে জোটের শরিক দল হিসাবে সব সুযোগ পায় সেই চেষ্টাও করে যাচ্ছেন। এদিকে বিএনপি সরাসরি না বলেলও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসতে চাইছে। তারা বঙ্গ ভবনে বসে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রস্তাব দিতে চায়।
জামায়াতে ইসলামীর তরফ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে সংলাপে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন। গত ১৯ ডিসেম্বর এই জন্য জামায়াতের তরফ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে সংলাপে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মকবুল আহমাদ রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি নির্ধারণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে আপনি সংলাপের যে মহান উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাকে স্বাগত জানায় এবং আন্তরিকভাবে সফলতা কামনা করে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল। স্বাধীনতার পর প্রায় প্রতিটি সংসদে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ তথা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী বিজয় লাভ করেছে। অধিকন্তু এ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
তিনি রাষ্ট্রপতিকে আরও বলেছেন, জামায়াত একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জামায়াতের নিবন্ধন মামলাটি বিচারাধীন আছে। স্বাভাবিকভাবেই জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে সংলাপে অংশগ্রহণ করার অধিকার জামায়াতের রয়েছে।
তিনি তাদের অধিকারের কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি আরও বলেছেন, দেশের একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ায় সংলাপকে অর্থবহ করে তোলার জন্য উক্ত সংলাপে জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা বাঞ্ছনীয়। তিনি চিঠিতে আশা প্রকাশ করেছেন, আশা করি দেশের জনগণের যথাযথ প্রতিনিধিত্বের স্বার্থে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে সংলাপে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সরকারের নীতি নির্ধারকদের একজন বলেন, জামায়াতে ইসলাম সংসদে প্রতিনিধিনিত্ব করেছে অতীতে। তখন তাদের নিবন্ধন ছিলো। নির্বাচন কমিশনে এখন আর এই দলটি কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়। তারা নিবন্ধিত না হওয়ার কারণে তাদেরকে ডাকারও সুযোগ নেই। কারণ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করেছে এমন কোনো দলের সঙ্গেতো রাষ্ট্রপতি কোনো সংলাপ করছেন না। জামায়াতের এখন নিবন্ধন নেই কমিশনে। তাছাড়া জামায়াতে ইসলামীকে তো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে সংগঠনের বিচার করার জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এই রকম একটি সংগঠনের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপে বসার সুযোগ নেই।
তিনি আরও দাবি করেন, জামায়াতের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ করবেন না বলেই আমরা আশা করি। করলে এই ব্যাপারে প্রতিবাদও জানানো হবে।
এদিকে বিশেষ একটি সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন নিয়ে সংলাপে বসবেন না বলেই আমরা জানি। তবে এই ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তাছাড়া জামায়াত রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিলেও সেই ব্যাপারে কোনো উত্তর দেওয়া হবে এমন কোনো সিদ্ধান্তও নেই। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন