রপ্তানি বাড়াতে বৈদেশিক মিশন গতিশীল করা হচ্ছে
হাসান আরিফ: রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে বৈদেশিক মিশনগুলোতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম গতিশীল করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্যে ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গত অর্থ বছরের ৩৪ বিলিয়ন ডলারের আয় আগামী ৩ অর্থবছরের মধ্যে প্রায় দ্বিগুণ করার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর বাস্তবতায় রোডম্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য বিএসটিআইকে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, আমেরিকায় রপ্তানি বাড়াতে আইটি ফোকাসড প্রোগ্রাম করা হয়েছে। আর ইউরোপে পণ্যভিত্তিক মেলা বাড়ানো হবে। এছাড়া লসএঞ্জেলস, বার্লিন, সিঙ্গাপুর, প্যারিস, জেনেভা উইং-এর কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর ইপিবি মনে করে ব্রেক্সিট বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশের আরও সময় নেওয়া প্রয়োজন। এদিকে পাশের দেশ মিয়ানমারেও সরকার বাণিজ্য বাড়াতে চায়। তাই মায়ানমারে একক দেশীয় মেলা আয়োজনের বিষয়ে ইয়াঙ্গুনের কমার্শিয়াল কাউন্সিলরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি পাঠানো হবে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য ইপিবি আমদানি-রপ্তানিকারকদের তালিকাসহ ডাইরেক্টরির ইপিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সভাপতি ডাইরেক্টরির কপি এফবিসিসিআইসহ বাণিজ্য সংগঠনগুলোতে পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানায়, জিএসপি প্লাস মর্যাদার প্রস্তুতি হিসেবে সরকার সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ কোনো পণ্য জিএসপি মর্যাদা পাবে না যদি পণ্যটি ইইউ মার্কেটে প্রতিযোগী না হয় এবং যদি পণ্যটি বহুমুখী পণ্য না হয়। সে সাথে দেশটিকে ২৭টি ইউএন কনভেনশন রেটিফাই করতে হবে। এর মধ্যে কতটি কনভেনশন বাংলাদেশ রেটিফাই করেছে সে বিষয়ে জানানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, বিএসটিআইএর ল্যাবগুলো পূর্ণমাত্রায় কাজ করা হচ্ছে। কারণ আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের তালিকা প্রস্তুত ও আধুনিক মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএসটিআইকে গড়ে তুলতেই বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিএসটিআই এর আরও অগ্রগতি প্রয়োজন। পানি, রড ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী পরীক্ষা এবং রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের মান যাচাইয়ের জন্য উপযুক্ত মানের ল্যাবরেটরি গড়ে তোলতেই এ উদ্যোগ। কারণ এই প্রতিষ্ঠানটির দ্রুত এক্রিডিটেশন প্রয়োজন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট-বিআরআরআইকে বিএবি কর্তৃক এক্রিডিটেশন দেওয়া হয়েছে। উদ্ভিদ ও কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি ও বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে ফার্ম টু মার্কেট কুলিং চেইন স্থাপন এবং কৃষি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে গ্যাপ অনুসরণ ও কনট্রাক্ট ফ্রেমিং এরও অগ্রগতি রয়েছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে এ খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বাকি সব পণ্য থেকে আসবে ১০ কোটি ডলার। বর্তমানে বিশ্বের ১৯৮ দেশে ৭৪৪ ধরনের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। তবে বর্তমানের দ্বিগুণ আয় বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে রপ্তানিকারকদের মধ্যেই।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমানে যে হারে রপ্তানি হচ্ছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় হয়। হয়তো পোশাক খাত থেকে ৪০-৪২ বিলিয়ন ডলার আয় আসতে পারে। কিন্তু আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বছরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে ১২ শতাংশ। অথচ এখনো প্রবৃদ্ধি সাড়ে সাত-এ পৌঁছতে পারেনি। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সব অবকাঠামোর উন্নয়ন ও স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা দরকার। সম্পাদনা: এনামুল হক