আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী জিএসপির পেছনে না ছুটে নতুন বাজার খুঁজুন
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সেস) সুবিধার পেছনে না ছুটে নতুন বাজার সৃষ্টি এবং পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানোর বাজার তৈরি করুন।
গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০১৭ এর উদ্বোধন ও জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ পরামর্শ দেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে ২০১৭ সালের জন্য ‘প্রডাক্ট অব দি ইয়ার’ ঘোষণা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন,উদীয়মান চামড়া শিল্পখাতের অন্তর্নিহিত সকল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে আমি আগামী ২০১৭ সালের জন্য চামড়া ও পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্যকে জাতীয়ভাবে বার্ষিক পণ্য বা প্রডাক্ট অব দি ইয়ার হিসেবে ঘোষণা করছি। জিএসপি বিষয়ে কোনো হতাশায় না থেকে নতুন বাজার সৃষ্টির তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তার সরকার শুধু পোশাক শিল্পের মধ্যে রপ্তানি আয়কে সীমাবদ্ধ না রেখে রপ্তানি পণ্যের বাজার বহুমুখী করার উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন,৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তা আরও কার্যকর করার পন্থা অবলম্বন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্য দেশে নতুন বাজার খুঁজুন, ওরাই আমাদের পিছনে ছুটবে। বাংলাদেশ যত দ্রুত পণ্য দিতে পারবে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ তা দিতে পারবে না। এদেশের মানুষ যোগ্য ও মেধাবী। একটু সুযোগ সৃষ্টি করলে যে কোনো কিছু তারা করতে পারে।
নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার পাশাপাশি পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করছি। গতানুগতিক কিছু পণ্যের ওপর নির্ভর না করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে। সে অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকা- এবং পরের বছর রানা প্লাজা ধসে সহ¯্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুতে আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশনের (এএফএল-সিআইও) আবেদনে ২০১৩ সালের ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়। এর আওতায় বাংলাদেশ এর আগে পাঁচ হাজার ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করা যেত। তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ওই সুবিধা পেত না।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণ করেন। স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ তিন ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। এবার সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসাবে জাতীয় রপ্তানি ট্রফিতে স্বর্ণপদক পেয়েছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড। নির্ধারিত ৩২টি পণ্য ও সেবা ক্যাটাগরির ১৯২টি আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৯টি স্বর্ণ, ২২টি রৌপ্য এবং ১৫টি ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে।
তৈরি পোশাকে একেএম নিটওয়্যার লিমিটেড, জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ, সকল ধরনের সুতায় কামালইয়ার্ন, টেক্সটাইল ফেব্রিক্স প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, হোম ও স্পেশালাইজ টেক্সটাইলে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স, টেরিটাওয়েলে নোমান টেরিটাওয়েল মিলস, হিমায়িত খাদ্যে অ্যাপেক্স ফুড্স, কাঁচা পাটে পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ, পাটজাত দ্রব্যে আকিজ জুট মিল্স, চামড়ায় অ্যাপেক্স ট্যানারি, চামড়াজাত পণ্যে পিকার্ড বাংলাদেশ, ফুটওয়ারে ফুটবেড ফুটওয়্যার, কৃষিজ পণ্য মনসুর জেনারেল ফিডিং স্বর্ণপদক পেয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে সম্মেলন কেন্দ্রের সঙ্গে বাণিজ্য মেলার মাঠে কয়েকটি স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। আরও উপস্থিত ছিলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান মাফরূহা সুলতানা।