ইনডিপেন্ডেন্ট’র সম্পাদকীয় গণগ্রেফতারে তুরস্কে শান্তি আসবে না
এম রবিউল্লাহ: নতুন বছরের প্রথম দিনেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রক্তপাত ঘটায় দুর্বৃত্তরা। সিরিয়ায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। শান্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূূর্ণ ভূমিকা রাখছে তুরস্ক ও রাশিয়ার। দুই দেশের যৌথ প্রচেষ্টায় শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনে লাখো মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে। অনেকে আহত হচ্ছে, প্রিয়জন হারাচ্ছে ও গৃহহারা হচ্ছে। মিসরেও গত কয়েক বছর ধরে চলছে রাজনৈতিক সংকট। রাজনৈতিক সংকটের কারণে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে দেশটিতে। তুরস্ক এখন আঞ্চলিক সুপারপাওয়ার রাষ্ট্র। ন্যাটোর সদস্য এই দেশে বিপর্যয়ের সমাপ্তি হচ্ছে না। লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবতা। বাড়ছে সহিংসতা। এই সহিংসতার পেছনে অভ্যন্তরীণ অনেক বাহিনীর হাত রয়েছে। ইসলামি চরমপন্থা, কুর্দিশ বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ধর্মীয় নিরপেক্ষতা শক্তির হাত রয়েছে। গেল বছরের ১৫ জুলাই তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যর্থান হয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোগানের শাসনামলে অনেক বর্বরতাও দেখা যাচ্ছে তুরস্কে।
তুরস্কে বর্বরতা অটোম্যান সা¤্রাজ্যের পতন থেকে শুরু হয়েছে। এই ধরনের বর্বরতা শুধু তুরস্কের জন্যই দুঃসংবাদ নয়। এটি আঞ্চলিক ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তুরস্কের সহিংসতা পুরো ইউরোপ সর্বপরি সারা বিশ্বের জন্যই খারাপ সংবাদ। নি¤œ মানের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বর্তমানে তুরস্কের জন্য মামলি ব্যাপার। প্রতি মাসেই তুরস্কে বৈষম্যের কারণে হত্যা বা রাজনৈতিক হত্যাকান্ড, বিয়ে বাড়ির অতিথিদের টার্গেট করে হত্যা, বিমানবন্দরে টার্গেট করে হামলা, সামরিক বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া পার্টিতে যোগ দেওয়া অতিথিদের টার্গেট করে হামলা, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে হত্যা আর বছরের শুরুতে সর্বশেষ নাইটক্লাবে হামলা চালানো হয়েছে। সর্বশেষ ওই হামলায় ৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। তুরস্কের ধর্মীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে হামলাগুলো ধর্মীয় মৌলবাদীদের কাজ।
হামলার পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান স্বাভাবিকভাবে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পুলিশ ও অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রেসিডেন্টের নির্দেশ মোতাবেক সন্ত্রাসী সন্দেহে গণগ্রেফতার চালান। প্রকৃতপক্ষে সন্দেহজনকভাবে গণগ্রেফতার কোনো সমাধানের পথ নয়। তুরস্কের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি এখন বিভ্রান্তিকর। এটি পরিবর্তন করার প্রয়োজন। আর গণগ্রেফতার পরিহার করতে হবে।
একই সময়ে তুরস্ক রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে সিরিয়ায় আইএস দমনে নেমেছে। তুরস্কের বিরোধীদলীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে সামরিক অভ্যর্থানের জন্য দোষারোপ করে আসছে তুরস্কের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল। ফেতুল্লাহ গুলেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন।
এর আগে তুরস্ক বিপজ্জনকভাবে বোকার মতো করে আইএসের সমর্থনে কুর্দিশদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। এরও আগে তুরস্কের সরকার সিরিয়ার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। পশ্চিমাদের মতো করে জাবাত-আল-নুসরাহ ফ্রন্টের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি। এই গ্রুপের সঙ্গে আল কায়দার যোগসাজস রয়েছে।
কোনো কাজই তুরস্ক বা এরদোগানের জন্য ভালো ছিল না। তুরস্কের সরকার বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে আসলে তার জাতি কিভাবে হুমকির মধ্যে পড়ছে। তুরস্ককে বুঝতে হবে যে তারা সাদ্দাম হোসেন বা আসাদ সরকারের মুখোমুখি হচ্ছে না। তাদের বুঝতে হবে কুর্দিশ জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
এই ক্ষেত্রে তুরস্কের সরকারকে অবশ্যই কুর্দিশ নেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সমাধান বের করতে হবে। কুর্দিশদের ভূ-খন্ডতা বজায় রাখতে হবে। তাতে তুরস্কে চলমান সহিংসতা দূর হবে আর আঞ্চলিকভাবে শান্তি আসবে।
প্রেসিডেন্ট এরদোগানের অধীনে দেশটির মধ্যে শান্তি আসতে পারে। নতুন বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে যেহেতু সুসম্পর্ক রয়েছে সেহেতু আঞ্চলিক ক্ষেত্রে মিলে মিশে সহিংসতা বন্ধ হতে পারে। নতুন বছরে তুরস্কের জন্য এটি হতে পারে যথাযথ সময়। সূত্র : ইন্ডেপিডেন্ট