ইরাক সফরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, ২ দিনে মসুলে নিহত ৮৬
ইমরুল শাহেদ: ইরাকের মসুলে ফেডারেল পুলিশ, হিজবুল্লা ব্যাটেলিয়ন ও যৌথ বাহিনীর অভিযানে রোববার ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ৬৮ জঙ্গি এবং পালাতে গিয়ে বোমা বিস্ফোরণে ১৮ জন বেসামরিক লোক মারা গেছেন। এর মধ্যেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দ ইরাকের যৌথ বাহিনীতে যুদ্ধরত ফরাসী সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ইরাক সফরে গেছেন। ইরাকি বার্তা সংস্থা আলালাম জানিয়েছে, ইরাকের ফেডারেল পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে আইএসআইএলের একজন দুর্ধর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন। তার নাম আহমদ মানাতি। ফেডারেল পুলিশের কমান্ডার রায়েদ শাকের জুদাত এ খবর নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া এই সন্ত্রাসী গ্রুপের আরও কয়েকজন সদস্য নিহত হয়েছেন বলে বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে। আলাহাম জানিয়েছে, ইরাকি যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৬৮ জন আইএস জঙ্গি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৮ জন মারা গেছেন দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় নিনেভেহ অঞ্চলে এবং ৩০ জন নিহত হয়েছে তাল আফার নামের একটি শহরে। সেখানে অভিযান চালিয়েছে ইরাকি হিজবুল্লা ব্যাটেলিয়ন। এ সময় আইএসের বিস্ফোরক বহনকারী গাড়িও ধ্বংস করা হয়। রোববার নিনেভেহ প্রভিন্সিয়াল কাউন্সিলের সদস্য আবদুল সাত্তার আল-হাবু জানান, ইরাকের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে মসুল লিবারেশন অপারেশন শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দুই হাজার আইএস সদস্য নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসামরিক লোকদের একটি দল ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হাত থেকে রক্ষা পেতে উত্তরের হাবিজা শহর ছেড়ে ট্রাকে করে আল-আলম শহরে পালিয়ে যাবার সময় পর পর দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন। রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের লক্ষ্য করে গোলা হামলা চালিয়েছে । শহরটির দুটি খালি স্কুল ভবনের কাছে এই হামলা চালানো হয়। এই স্কুলভবন দুটি থেকে ইরাকি সেনাদের অবস্থান লক্ষ্য করে আইএস জঙ্গিরা মর্টার হামলা চালাত বলে রোববার মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। হামলার সময় সেখানে কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না।
এই পরিস্থিতিতেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইরাকি বাহিনীকে সহায়তাকারী ফরাসি বাহিনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও ইরাকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য সোমবার ইরাক পৌঁছান। ওলাঁদ এর আগে ২০১৪ সালেও একবার ইরাক সফর করেছিলেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, বাগদাদে ওলাঁন্দ অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে জঙ্গি নির্মূলের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ইরাকে যদি কোনো ফরাসি জঙ্গি থেকে থাকে তাহলে দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। বর্তমানে আইএসের সহযোগী হিসেবে ৬০ জন ফরাসি নাগরিক মসুলে যুদ্ধ করছে। ফ্রান্সের কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, আরও শতাধিক ফরাসি নাগরিক ইরাকের বিভিন্নস্থানে ও সিরিয়ায় জঙ্গিদের হয়ে যুদ্ধরত আছে। ইরাকে এক দিনের সফরকালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট দেশটির উত্তরাঞ্চলের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্থানে যাবেন। ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জ্যাঁ-ভেস লি দ্রিয়ান তার সঙ্গে সফরে রয়েছেন।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে অবদান রাখা দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হল ফ্রান্স। জোট ইতোমধ্যে সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের ওপর কয়েক হাজার হামলা চালিয়েছে এবং ইরাকি বাহিনীকে সামরিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছে।
জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফ্রান্সের ১৪টি জঙ্গি বিমান অবস্থান করছে এবং এখান থেকে বিমানগুলো জোটের অভিযানে অংশ নিচ্ছে। এছাড়া ফ্রান্সের ৫শ সৈন্য ইরাকি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছে। মসুল নগরী পুনরুদ্ধারে চলমান অভিযানে সহায়তা করতে নগরীতে সামরিক যান মোতায়েন রয়েছে।