ইস্তাম্বুল হামলার দায় স্বীকার আইএসের নিহতদের মধ্যে ২ জন ভারতীয়
ইমরুল শাহেদ: তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে রেইনা নাইটক্লাবে হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। এক বিবৃতিতে গ্রুপটি বলেছে, তাদের ‘একজন বীর সৈনিক’ এই হামলা চালিয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, এ সময় ক্লাবটিতে প্রায় ছয়শ’ লোক আনন্দ উৎসবে মেতে ছিল। ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনকালে শনিবার রাতে নগরীর বেসিকতাস এলাকার জনপ্রিয় এ ক্লাবে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৪০ জন নিহত ও ৬৯ জন আহত হন। নিহতদের মধ্যে ২৭ জন ছিলেন বিদেশি। নিহত ২৭ বিদেশি নাগরিকের মধ্যে ইসরায়েল, বেলজিয়াম, লেবানন, জর্ডান, ফ্রান্স, তিউনিশিয়া, সৌদি আরব, কানাডা এবং ভারতের নাগরিক রয়েছেন। ভারতীয় নাগরিকদের সম্পর্কে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন, শনিবার রাতে ইস্তাম্বুলে জঙ্গি হামলায় মৃতদের মধ্যে ২ জন ভারতীয় রয়েছেন। মৃতরা হলেন- আবিস হাসান রিজভি ও খুশি শাহ। আবিস মুম্বাইয়ের বাসিন্দা। তিনি রাজ্যসভার প্রাক্তন সংসদ সদস্য আখতার হাসান রিজভির বড় ছেলে। বলিউডের প্রযোজক আবিস ‘রোর: টাইগার অব দ্যা সুন্দরবনস’ নামে একটি ছবিও প্রযোজনা করেছেন। এছাড়া মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় নির্মাণ-ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তিনি। খুশি শাহ গুজরাটের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
বিবৃতিতে আইএস অভিযোগ করে বলেছে, পাশের দেশ সিরিয়ায় তুর্কি সেনারা তাদের উপর হামলা চালাচ্ছে। তারই জবাবে তারা এই হামলা চালিয়েছে। এর আগে গত বছর আইএস তুরস্কে আরও দুটি বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। এই হামলার সঙ্গে দু’জন জড়িত ছিলেন বলে এর আগে যে খবর বেরিয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সয়লু।
বিবিসি জানিয়েছে, হামলাকারী একটি টেক্সীতে করে ক্লাবে আসে। ক্লাবে ঢোকার মুখে এসেই গুলি শুরু করে এবং হামলাকারী ১৮০টি গুলি করেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের এই নাইট ক্লাবটিতে ঢোকার প্রবেশপথে গুলি করে একজন পুলিশ সদস্য ও একজন নিরাপত্তারক্ষীকে হত্যা করা হয় প্রথমে। গুলি বর্ষণ শেষে বহু মানুষের ভিড়ে হত্যাকারী সহজেই মিশে গিয়ে পালিয়ে যায়। তার আগে হামলাকারী ওভারকোটটি খুলে ফেলে। পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে তুরস্কের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, হামলাকারী উজবেকিস্তান বা কিরগিজস্থানের হতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি হামলাকারী খুব দ্রুতই গ্রেফতার হবে।’
স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, একজন বন্দুকধারী নাইটক্লাবে হামলা চালিয়েছে। এ সময় তার বেশ-ভূষা ছিল সান্তা ক্লজের। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে গেছে পুলিশের অতিরিক্ত গাড়ি ও বেশকিছু অ্যাম্বুলেন্স। এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভয়ংকর পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়্যব এরদোগান ও প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম। এরদোগান বলেছেন, ‘হামলাকারীদের উদ্দেশ্য হলো আমাদেরকে মাসনিকভাবে দুর্বল করা ও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।’
নাইটক্লাবটিতে হামলা হওয়ার একদিন আগে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) বলেছে, তারা কখনোই নিরাপরাধ বেসামরিক লোকদের টার্গেট করবেন না।
নিহতদের অনেকেরই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বিশ্বের সব শীর্ষ নেতারাই নিন্দা জানিয়েছে এই বর্বরোচিত হামলার। নিন্দা জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিসও।