নথি চেয়ে চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট রায়ের নথি না আসায় আড়াই দশকেও নিষ্পত্তি হয়নি জেল আপিল
এস এম নূর মোহাম্মদ : আব্দুল জব্বার, যাকে একটি মামলায় রংপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত ৮৯ সালে সাত বৎসরের কারাদ- দেন। পরে তিনি সাজার বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন হাইকোর্টে। তবে আবেদনের সঙ্গে নিম্ন আদালতের রায়ের নথি না থাকায় আড়াই দশক পার হলেও আপিল নিষ্পত্তি হয়নি এখনো।
মকবর আলী, একটি মামলায় ৮৯ সালে ১০ বছরের কারাদ- দেন পঞ্চগড়ের সহকারী দায়রা জজ আদালত। এরপর সাজার বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন তিনিও। তবে নিম্ন আদালতের রায়ের নথি না থাকায় আপিল নিষ্পত্তি হয়নি এখনো।
মো.আব্দুল মতিন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলায় ৯৯ সালে রংপুরের জেলা জজ আদালত ৩০ বছরের সশ্রম কারাদ- প্রদান করেন। সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জেল আপিল করেন তিনিও। তবে নিম্ন আদালতের রায়ের নথি না থাকায় সে আপিলও নিষ্পত্তি ।
এরকম কয়েকশ জেল আপিল পড়ে আছে উচ্চ আদালতে। প্রয়োজনীয় সব নথি-পত্র না থাকায় শুনানি করা যাচ্ছে না এসব আবেদন। আর আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বিচার প্রার্থীরা। কেননা নি¤œ আদালতের সাজা বাতিল হলে তার সুবিধা পাবেন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। কিন্তু প্রয়োজনীয় সকল নথি-পত্রের অভাবে জেল আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় অনেকে সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো.আজিজুল হক বলেন, এরকম অসম্পূর্ণ আবেদন থাকার বিষয়টি আগে নজরে আসেনি। প্রধান বিচারপতির নির্দেশের পর পুরনো মামলার তালিকা তৈরি করার সময় বিষয়টি ধরা পরে। তাই এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখন এসব তথ্য আসলে আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। এতে বিচার প্রার্থীরা উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি এধরনের ত্রুটিপূর্ণ আবেদন চিহ্নিত করে ৩৬টি কারাগারে চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যেখানে প্রায় সাড়ে পাঁচ’শ আবেদনের ক্ষেত্রে রায়ের কপি পাঠাতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, জেল আপিলের সঙ্গে রায়ের কপি পাওয়া যায়নি। রায়ের কপি পরবর্তীতে পাঠানোর শর্তে আবেদন পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এরপর আর রায়ের কপি পাঠানো হয়নি। আর রায়ের কপি ব্যতিত আবেদনগুলো কোর্টে উপস্থাপন করা হলে বিচারপতিগণ বিব্রত বোধ করেন এবং সংশ্লিষ্ট শাখাকে রায়ের কপি দ্রুত সংগ্রহের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, অনেকের এরই মধ্যে সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে।রায়ের কপি না থাকায় বন্দীদের জেল আপিলের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই উল্লেখিত আবেদনের বিপরীতে রায়ের অনুলিপি এবং জেল আপিল সমূহে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোন বন্দী কারাগারে আটক রয়েছে কি না তা জানাতে বলা হয় চিঠিতে।
এর আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা পুরনো সব মামলা চিহ্নিত করে সেগুলো নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের পর এ চিঠি পাঠানো হলো হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে। জানা গেছে, নি¤œ আদালতের যে কোন সাজার বিরুদ্ধে ৩০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপিল করতে পারেন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা। আর যাদের আপিল করার সামর্থ নেই তারা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেল আপিল করতে পারেন।
তবে বিশেষ ক্ষেত্রে উল্লেখিত সময়ের পরও আবেদন করা যায়। কিন্তু আপিল নিষ্পত্তির কোন সুনির্দিষ্ট সময় সীমা নেই। আর সাজার বিরুদ্ধে জেল আপিল করার ক্ষেত্রে আবেদন পত্রের সঙ্গে নি¤œ আদালতের রায়ের কপি এবং বিজি প্রেসের ফরম যুক্ত করতে হয়। বিজি প্রেসের ফরমে মামলার সব তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। জেল আপিল হাইকোর্টে আসার পর সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। এরপর এটি পাঠানো হয় এডমিশন শুনানির জন্য। তারপর এটি হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হয়। আর হাইকোর্টে নিষ্পত্তির পর কেউ প্রয়োজন মনে করলে আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি