জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে শামীমা, জ্ঞান ফিরেনি ৯ দিনে ও
আল-আমীন আনাম: ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে দুবৃত্তদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হওয়ার ৯ দিন পরও জ্ঞান ফিরেনি জয়পুরহাটের কালাই থানার বানদীঘির স্কুলছাত্রী শামীমার। তাই চিকিৎসকরা তাকে শঙ্কামুক্ত বলতে পারছেন না। বরং দিন দিন তার অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে। সঙ্গে পরিবারের উৎকন্ঠাও বাড়ছে। গত মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে অপারেশন শেষে ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রয়েছেন শামীমা। গত ২৫ ডিসেম্বর গভীররাতে নিজ শয়ন কক্ষে নবম শ্রেণির এই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় সম্ভ্রম লুটে নেয়ার চেষ্টারত দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন তিনি। একপর্যায়ে চিনেও ফেলেন দুর্বৃত্তদের। এরপর হাতে থাকা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শামীমাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দুর্বৃত্তরা। মাথায়, মুখে ও কপালে অসংখ্য আঘাতের পর আঘাত করে মৃত ভেবে রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায় ধর্ষণ চেষ্টাকারীরা। ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, ‘শামীমাকে শক্ত লোহার বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তার মাথায় পাঁচটি আঘাত। মাথার পিছনে একটি গভীর ক্ষত। খুলি ভেদ করে ভেতরে ঢুকে পড়েছে। কপালের ভ্রুতে, বাম চোখের পাশে ও মুখের ভেতরে জিহ্বার গোড়ায় একটি করে আঘাত রয়েছে। তার অপারেশন হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে মানুষের জ্ঞান বা চেতনার মাত্রা ১৫ থাকে। কিন্তু শামীমার চেতনার মাত্রা এখন আটদিন। তবে তার চেতনা ফিরবে কিনা তা জানতে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। এর আগে কিছুই বলা যাবে না।’ শামীমার মা রহিমা আক্তার বলেন, ‘রাতে দুর্বৃত্তরা দেয়াল টপকে ঢুকে আমার মেয়ের কক্ষে প্রবেশ করেছে। তাকে হয়তো ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মেরে ফেলার জন্য আঘাতের পর আঘাত করে আবার দেয়াল টপকে পালিয়ে গেছে। সকালে ঘুম ভাঙার পর তার কক্ষে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে শেষ। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’ তিনি বিলাপ জুড়ে দিয়ে আরও বলেন, ‘আমারা অশিক্ষিত হলেও আমার মেয়ে পড়াশুনা করে ডাক্তার হতে চেয়েছিল। তাই সায়েন্স নিয়েছিল। তাকে উৎসাহ দিয়ে আমি ও তার বাবা বলতাম মা যত পড়তে চাস, তত পড়াবো তোকে। আমার সেই মেয়ে কী আমার কোলে ফিরে আসবে? আমাদের তো কোনো শত্রু নেই। কখনও কারো কোনো ক্ষতি করিনি। তারপরেও কেন এত বড় ক্ষতি হল?’ সম্পাদনা : মাছুম বিল্লাহ