ব্যয় ৪ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা রাশিয়া থেকে আসছে ১৬টি এয়ারক্রাফট ভিআইপি স্যালুনসহ ৬টি এমআই হেলিকপ্টার
হাসান আরিফ: রাশিয়ার কাছ থেকে ১৬টি প্রশিক্ষণ এয়ারক্রাফট ও ৬টি এমআই হেলিকপ্টার কিনবে বাংলাদেশ। এজন্য ব্যয় হবে ৪ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে রাশিয়াকে ৪৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি টাকা আগামী তিন অর্থ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এই জন্য আগামী অর্থ বছরগুলোতে বাজেট বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বিমান বাহিনী সদর দফতর।
বিমান বাহিনী সদর দফতরের চিঠিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সরকার টু সরকার (জিটুজি) চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য ১৬টি ইয়াক-১৩০ কমব্যাট ট্রেইনার এয়ারক্রাফট, ৫টি এমআই-১৭১ এমএইচ হেলিকপ্টার এবং ১টি এমআই-১৭১ ভিআইপি স্যালুন হেলিকপ্টার কিনবে সরকার।
স্টেট ক্রেডিট ঋণচুক্তির আওতায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য এয়ারক্রাফট ও হেলিকপ্টার কেনার জন্য রাশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ৫৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রায় ৪ হাজার ৩৯২ কোটি টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আওতায় বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে ১৬টি ইয়াক কমব্যাট ট্রেইনার এয়ারক্রাফট, ৫টি এমআই-১৭১ এমএইচ হেলিকপ্টার এবং ১টি এমআই-১৭১ ভিআইপি স্যালুন হেলিকপ্টার কেনা হচ্ছে।
চুক্তির আওতায় ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০ শতাংশ অগ্রিম বাবদ ৪৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এছাড়া আকাশযান সরঞ্জামাদি পাওয়ার সাপেক্ষে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে সুদ বাবদ অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। তাছাড়া ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে সুদসহ আসল যথাক্রমে ৪শ কোটি ৫৬৬ কোটি এবং ৫৪৮ কোটি টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। যা পর্যায়ক্রমে ২০২৭-২৮ অর্থবছরে শেষ হবে। এছাড়াও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে এরমধ্যে সম্পাদিত অন্যান্য চুক্তিগুলো সচল ও বাস্তবায়নে প্রতিবছর বিমান বাহিনীর বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কিস্তি বাবদ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কালন ২ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেট প্রক্ষেপন যথাক্রমে ৩ হাজার ১৩৪ কোটি ও ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা সিলিং দেওয়া হয়েছে।
বিমান বাহিনী সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত বাজেটের আওতায় অন্যান্য চুক্তিগুলো সচল রেখে এয়ারক্রাফট ও হেলিকপ্টার কেনার জন্য স্টেট ক্রেডিট ঋণচুক্তির কিস্তি পরিশোধ করা বিমান বাহিনীর জন্য অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়বে। এই কারণে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে আকাশযান খাতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা রাখা হয়েছিল, সে পরিমাণ অর্থ না পাওয়া গেলে আগামী অর্থবছরে বিমান বাহিনীর প্রাত্যহিক কার্যক্রমসহ বিমানের কিস্তি পরিশোধ সচল রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত ঋণচুক্তির সুদ আসল বাবদ আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৫ অক্টোবর ২০১৭ এবং ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিলে ৪শ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। ২০১৮-১৯ সালে ৫৬৬ কোটি টাকা ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৪৮ কোটি টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে হবে, যা ২০২৭-২৮ অর্থবছর পর্যন্ত চলমান থাকবে। এ পরিস্থিতিতে বিমান বাহিনীর কিস্তি পরিশোধসহ দৈনন্দিন কার্যাবলী পরিচালনা করার জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত বিমান বাহিনীর নির্ধারিত বাজেট সিলিং-এর অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন।
বিমান বাহিনীর জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলন এবং ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রক্ষেপন ব্যয়সীমা পুন:নির্ধারণের জন্য অনুরোধ করেছে বিমান বাহিনী। এজন্য আগামী অর্থবছরে যে ব্যয় ধরা হয়েছে তার চেয়ে ৪শ কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন। একইভাবে ২০১৮-১৯ সালে যে ব্যয় ধরা হয়েছে তার চেয়ে ৫৬৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন। ২০১৯-২০সালের জন্য যে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে তার চেয়ে ৫৪৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন।
বিমান বাহিনী প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৩ হাজার ৩১৬ কোটি টাকার সিলিং। ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিমান বাহিনীর প্রক্ষেপিত বাজেটে যথাক্রমে ৩ হাজার ৭শ কোটি এবং ৩ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা সিলিং বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে বিমান বাহিনী সদর দফতর থেকে। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী