খুনিদের টার্গেট মন্ত্রী-এমপি
* লিটনের মোবাইল কললিস্ট সংগ্রহ * তিনটি গ্রুপ হত্যায় অংশ নেয় * ৭২ থেকে ৭৪ সাল পর্যন্ত সাত এমপি হত্যা
বিপ্লব বিশ^াস: এবার জামায়াতের দিক নির্দেশনায় টার্গেট কিলিংয়ে নেমেছে জঙ্গিরা। বিশেষ করে জামায়াত অধ্যুষিত এলাকার মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের এরা টার্গেট করেছে বলে গোয়েন্দাদের সূত্র গুলো জানায়। দেশের বিভিন্ন সময় জ¦ালাও পোড়াও রাজনীতি, মানুষ হত্যা করে যখন কোনো লাভ পায়নি। সেই সূত্র ধরেই তারা এবার টার্গেট করেছে মন্ত্রী-এমপিদের। বিশেষ করে যে সকল মন্ত্রী-এমপি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সমাবেশ তথা বিভিন্ন মিডিয়ায় তাদের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তারাই মূলত তাদের টার্গেটের স্বীকার হতে পারে।
এদিকে, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন (৪৮) হত্যার কারণ নির্ণয়ে ৫টি সম্ভাব্য বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ বিষয়গুলো হলো-জেএমবি ও জঙ্গিদের পরিকল্পিত হত্যাকা- জামায়াত-শিবির চক্রের হামলা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, পারিবারিক শত্রুতা এবং সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচন।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান জানান, তিনি আশাবাদী খুব সম্ভব হত্যার মূল উদ্দেশ্য বের করতে পারবেন। এ মোটিভ জানা সম্ভব হলেই প্রকৃত হত্যাকারীকে বের করা সহজ হবে। তাই জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি তারাও এ বিষয়গুলো তদন্ত শুরু করেছেন। অপর একটি সূত্র বলেছে, লিটনকে হত্যার আগে তার মোবাইলফোনে পরপর তিনটি মোবাইল ফোন আসে। হত্যার পর ওই ফোনগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। পুলিশের সন্দেহ ওই ফোনগুলোর ব্যবহারকারী এবং তাদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেলে খুনিদের চিহ্নিত করা যাবে। ইতোমধ্যে লিটনের ফোনের কললিস্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ফোন কলগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এ ব্যাপারে র্যাব ও পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলেছে, লিটন হত্যায় তিনটি গ্রুপ কাজ করে। একটি গ্রুপ লিটনের ভবনের চারপাশে পাহাড়া দেয়। অপর গ্রুপটি প্রধান সড়কে মোটরসাইকেলে অব্স্থান নেয় এবং কিলিং গ্রুপটি হত্যায় অংশ নেয়। শোনা গেছে কিলিংয়ে ব্যর্থ হলে একটি ব্যাক আপটিমও কাজ করে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের অধ্যুষিত এলাকা হচ্ছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলার কঞ্চিবাড়ী পুলিশ ফাঁড়িতে ইতোপূবে জামায়াত-শিবিরের হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যে পুলিশের চার সদস্য নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে এমপি লিটনের পাল্টা আক্রমণের একাধিক ঘটনা ঘটে। এ সব ঘটনার জের ধরে পূর্ব থেকে জামায়াত-শিবির জঙ্গিগোষ্ঠীর টার্গেটে ছিলেন এমপি লিটন।
এমপি লিটন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনায় শিশু সৌরভের পরিবার আতঙ্কিত হয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। অন্যদিকে, গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, দেশবিরোধী শক্তি চক্রান্ত করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আরও ঘটনা ঘটাতে পারে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত নতুন নয়। ১৯৭২ থেকে ৭৪ সাল পর্যন্ত সাত জন এমপিকে মারা হয়েছে। জোট সরকারের আমলেও সংসদ সদস্য শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন সময়ে ষড়যন্ত্রকারীরা পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে।’ সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু