তৈরি পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রাণশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। কর্মসংস্থান, সঞ্চায়ন বৃদ্ধি ও আর্থিক প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। ’৭০ এর দশকের মাঝামাঝিতে দেশে তৈরি পোশাকের যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিবছরই এর পরিধি বাড়ছে।
তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮১-৮২ সালে মোট পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫ হাজার। ২০১৭ সালে এসে তা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যার ৮০ শতাংশই নারী শ্রমিক। ১৯৯৫-৯৬ সালে সমগ্র শ্রম শক্তিতে মহিলা শ্রমিকের অংশ ছিল ৩৮ শতাংশ তার মধ্যে ৭ শতাংশ ছিল উৎপাদন খাতে। বর্তমানে সমগ্র উৎপাদন খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকের পরিমাণ ৪০ শতাংশ।
পোশাক রপ্তানির কারণে আমদানি-রপ্তানি ব্যবধান হ্রাস পেয়েছে এবং বর্তমান রপ্তানি আয় দিয়ে ৮০ শতাংশ আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। তেমনিভাবে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধিতেও পোশাক শিল্প অপরিসীম অবদান রাখছে। পোশাক শিল্পের বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়ে উঠেছে অনেক সহযোগী শিল্প ব্যবস্থা এবং যোগাযোগ। সামগ্রিকভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত ৪০ লাখ শ্রমিক এবং সহযোগী শিল্প ও সেবা খাতের শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ফলে প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি মানুষের জীবিকার সংস্থান হয়েছে যা দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সত্তর দশকে বাংলাদেশ কেবলমাত্র কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল আর বর্তমানে রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই শিল্প পণ্য যা উন্নয়নশীল দেশে অনন্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিক-উজ-জামান বলেন, কৃষি নির্ভর অর্থনীতিকে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে রূপান্তরের মাধ্যমে সাধারণত: শিল্পায়নের শুরু হয়। তবে দেশ কাল ভেদে এর ভিন্নতাও লক্ষ্যণীয়। শিল্পায়নের মাধ্যমেই অর্থনীতির অপরাপর খাত, উপখাতের বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়। শিল্পায়ন ছাড়া কোনো দেশ উন্নত হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত বিরল। আমরা উন্নত দেশ না বলে, হামেশাই বলি শিল্পোন্নত দেশ। তাই দেশের অগ্রগতির জন্য শিল্পোন্নয়ন অপরিহার্য। আর বাংলাদেশের মত বিপুল ঘনবসতিপূর্ণ দেশে শিল্পোন্নয়নের গুরুত্ব আরও বেশি। সে প্রয়োজনটাই পূরণ করছে তৈরি পোশাক খাত।
মানব সম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন না করলেও পোশাক শিল্পে কর্মসংস্থান ও সম্পদ সৃষ্টিতে আশা জাগিয়েছে। বিশেষ করে সমাজের অবহেলিত নারী সমাজের কর্মসংস্থানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এতোদিন নারী শ্রমিক প্রধানত: কৃষি, কুটির শিল্প, গৃহকর্মী হিসেবেই নিয়োজিত ছিল। পুরুষ শ্রমিকের সমান এবং ক্ষেত্র বিশেষে বেশি শ্রম দিয়েও তাকে কম মজুরিতে সন্তুষ্ট থাকতে হতো। কুটির শিল্পে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিনা মজুরিতে কেবলমাত্র খাবারের বিনিময়ে দিনব্যাপি কাজ করতে হতো। এই অবহেলিত নারীদের সনাতন নিম্ন উৎপাদনশীল ক্ষেত্র থেকে তুলনামূলক উচ্চ উৎপাদনশীল পোশাক শিল্পে নিয়ে এসেছে। যদিও নিম্ন মজুরিতে তাদের আর্থিক দৈন্য কাটেনি, এখনও ন্যূনতম মজুরি বোনাস এবং উন্নত কাজের পরিবেশ সৃষ্টিতে তাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। কিন্তু পোশাক শিল্প প্রায় ৪০ লাখ নারীকে শুধু শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতিই দেয়নি, তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক পরিচয় দিয়েছে। তারা দেখছে তাদেরই নিপুণ হাতে তৈরি পোশাক বাংলাদেশকে বিশ্বে নতুনভাবে পরিচয় করে দিচ্ছে। সম্পাদনা: কিরণ সেখ