লিটনের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভায় শোক প্রকাশ এটা সরকারবিরোধী টোটাল গেম এর অংশ : প্রধানমন্ত্রী
আনিসুর রহমান তপন: সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে বৈঠকের শুরুতেই এই শোক প্রকাশ করে মন্ত্রিসভা। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানাগেছে এ তথ্য।
নাম প্রকাশে একাধিক মন্ত্রিসভার সদস্য জানান, গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য নিজবাড়িতে আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ায় এ শোক প্রকাশ করা হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্য লিটন সম্পর্কে বলেন, সুন্দরগঞ্জ এলাকাটি জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটি যখন দেশের বিভিন্নস্থানে অরাজকতা সৃষ্টি করে, তখন জামায়াতের শক্তঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সুন্দরগঞ্জ এলাকায় জামায়াত-শিবিরের তা-ব-সন্ত্রাস প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখে লিটন। এসব কারণে অনেক আগে থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী এই দুষ্কৃতকারীদের টার্গেট ছিল লিটন। শেখ হাসিনা এসময় বলেন, এমন ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। নিজের বাড়িতে বিশ্রাম নেয়ার সময় যেভাবে একটা লোককে মেরে ফেলবে, এটা ভাবা যায়! তিনি বলেন, এর আগেও এমন হয়েছে। লিটনকে মারার জন্য এর আগেও চেষ্টা করেছে তারা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, লিটন হত্যাকা- এর আগের বিভিন্ন চেষ্টার ধারাবাহিক ঘটনা। আগে সফল হতে পারে নাই, এবার সফল হয়েছে। কারণ এটা ছিল টার্গেট কিলিং।
এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে জানান, কয়েক বছর আগে জামায়াতের আমীর ও মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত অধ্যাপক গোলাম আযম এই সুন্দরগঞ্জে সভা-সমাবেশ করতে চাইলে সংসদ সদস্য লিটন সেটা প্রতিরোধ করে সভা বানচাল করে দেন। সেখানে গোলাম আযমকে সমাবেশ করতে দেন নাই এবং সুন্দরগঞ্জের মাটিতে নামতেই দেন নাই। ফলে গোলাম আযম সুন্দরগঞ্জে সমাবেশ না করেই সেসময় ঢাকায় ফেরত চলে আসতে বাধ্য হয়। এ কারণেও সংসদ সদস্য লিটনের ওপর জামায়াতের ক্ষোভ রয়েছে।
লিটন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এর আগে ছোট একটা শিশু সৌরভকে গুলি করা নিয়ে মিডিয়া লিটনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। প্রকৃত ঘটনা প্রতিবেদনে না দিয়ে এ ঘটনাতেও লিটনকে বলির পাঠা বানানো হয়। আসল ঘটনা তো অন্য খানে। সেসময় একটি চক্র লিটনকে মারার উদ্দেশ্যে গুলি করলে সেই গুলিতে আহত হয় শিশুটি। অথচ গণমাধ্যমে প্রচার হয়ে গেল এমপি লিটনের গুলিতে আহত হয়েছে সৌরভ।
লিটনের মৃত্যুতে শোকাহত প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় কালোচাদর গায়ে দিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। এদিন তিনি বেশ কম কথা বলেছেন। মন্ত্রিসভার নির্দিষ্ট এজে-ার বাইরে তেমন কোনো কথাই বলেননি। তবে লিটন হত্যা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা সরকারবিরোধী টোটাল গেম এর অংশ। এটা একটা জঘন্য কাজ। অনেক দিন থেকেই এই প্লট তৈরি করা হয়েছে। সবশেষে সফল হয়েছে হত্যাকারীরা। তবে এ ঘটনার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেন, কোন কারণে এবং কারা লিটনের হত্যাকারী সেটা খুঁজে বের করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রিসভা দুটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। একটি হল, দশম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের মৃত্যুতে। অপরটি আপিল বিভাগের বিচারপতি বজলুর রহমানের মৃত্যুতে। সম্পাদনা: এনামুল হক