বাংলাদেশে সম্প্রচার হওয়া বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা বিদেশি টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন বন্ধে আনন্দিত দেশি চ্যানেলের মালিকরা
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: বাংলাদেশে সম্প্রচার হওয়া বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকারের দেওয়া প্রজ্ঞাপনে আনন্দিত দেশি চ্যানেলের মালিকরা ও কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে দেশি কোম্পানির বিজ্ঞাপনগুলো কৌশলে বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে বাজার সম্প্রসারণের কথা বলে চালিয়ে আসছিল। যা শতভাগই শুভংকরের ফাঁকি।
তারা বলেন, বিদেশি চ্যানেলে বিদেশে বাংলাদেশের পণ্যের প্রসারের কথা বলে মূলত তারা ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে। যা একেবারেই অনৈতিক। দেশি চ্যানেলের মালিকরা বিষয়টি জোরালোভাবে মনিটরিং করার পরামর্শ দিয়েছেন। গতকাল সোমবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক তথ্য বিবরণীতে এই নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এর ব্যত্যয় ঘটলে বিদেশি টিভি চ্যানেল ডিস্ট্রিবিউশনের অনাপত্তি ও অনুমতি এবং লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুযায়ী অন্যান্য শাস্তি আরোপ করা হবে ।
এ ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ২০০৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন পাস হয়। আইনের ১৯(১৩) ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। সেই আলোকেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ না মানলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। বিজ্ঞাপন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত দেশি চ্যানেলের ক্ষতি না করে এই কাজ থেকে বিরত থাকা। তা নাহলে সরকার এ ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে। নিয়ম মানা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ঢাকা-বাংলা চ্যানেলের পরিচালক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই তিনি আমাদের এই আন্দোলনকে আমলে নিয়েছেন এবং কার্যকরে নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন দাতারা সরকারকে ফাঁকি দিয়ে দেশি চ্যানেলগুলোকে বঞ্চিত করে আসছিল। বিদেশে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার প্রসারিত হবে বলে তারা আইনের ফাঁক বের করে ভারতের চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচার করছিল। যা সেই দেশে প্রচার হচ্ছিল না। বাংলাদেশেই প্রচার হচ্ছিল। তাতে একদিকে পণ্যের প্রসারের কথা বললেও তা ছিল একেবারেই মিথ্যা , তেমনি দেশের টিভি চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপনের বাজার ছোট হয়ে আসছিল।
৭১ টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সামনে গত বছরই আমরা এই বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। এর আগে আন্দোলন করেছি, আইনি লড়াইয়ে গিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী এর যৌক্তিক কারণ বুঝতে পেরেছেন এবং এই ধরনের নির্দেশনা জারি হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। তবে ইতিপূর্বে যারা এই আইন ভঙ্গ করে করফাঁকি দিয়েছেন নিশ্চয়ই প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমরা খুশি।
টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ বলেন, এভাবে বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশে দেশি পণ্যের অবাধ বিজ্ঞাপন প্রচারে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলাম। বার বার এ নিয়ে ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে কথা বললেও তারা বিষয়টি কানে তুলছিল না। বাধ্য হয়ে আমাদের আন্দোলন করতে হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্ত দুদিক থেকেই ভালো হয়েছে। আমাদের পণ্যের বাজার যে বিদেশে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রসারিত হচ্ছিল না তা জানা হয়েছে। পাশাপাশি যে বিজ্ঞাপনগুলো বাইরে চলে যাচ্ছিল তা এখন দেশের টিভি চ্যানেলগুলো পাবে।
গতকাল পাঠানো তথ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, ‘কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনানুযায়ী বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বাংলাদেশে ডাউন লিংককৃত বিদেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা ভঙ্গকারী সংশ্লিষ্ট বিদেশি টিভি চ্যানেল ডিস্ট্রিবিউশনের অনাপত্তি ও অনুমতি এবং লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুযায়ী অন্যান্য শাস্তি আরোপ করা হবে।’
উল্লেখ্য, এ সংক্রান্ত আইনের ১৯(১৩) ধারায় বলা ওই ধারা লঙ্ঘন করলে শাস্তির বিধানও রয়েছে। এই আইনের ১৫ ধারা অনুসারে কোনো অনুষ্ঠান ১৯ ধারার পরিপন্থী হলে সরকার তাৎক্ষণিক বা যাচাই করে ওই চ্যানেলের বিপণন প্রজ্ঞাপন ও সম্প্রচার সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধের নির্দেশ দিতে পারে।
গত ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের জন্য আইনি নোটিস পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া। ওই নোটিসে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিদেশি চ্যানেলে এসব বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ না হলে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেওয়া হবে। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত