প্রতিষ্ঠার ৬৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ছাত্রলীগের
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আজ প্রতিষ্ঠার ৬৯ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সবকটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে এই ছাত্র সংগঠন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা আকাশচুম্বী।
এবার ছাত্রলীগ ৬৯ বছরের পূর্তিতে নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের ঘোষণা দিয়েছে। এ উপলক্ষে চারদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। আজ বুধবার ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি উৎসবমুখর ব্যতিক্রমী কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে আঁকা হচ্ছে সাত দশকের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস- ‘চিত্রপটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, সংগঠনের কর্মীরাই রঙতুলি দিয়ে দেয়ালগুলোতে ছাত্রলীগের গৌরবের ইতিহাস রচনা করছেন। এবার দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব ছবিতে ইতিহাস আর সমকালীন অর্জনগুলো থাকবে। রোকেয়া হল সংলগ্ন দেয়ালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি আঁকা হয়েছে। আরও থাকছে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান আর ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকার কথা। আরও রয়েছে বই উৎসবের চিত্র, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বিভিন্ন কার্যক্রম।
জাকির বলেন, এসব থেকে নতুন প্রজন্ম ছাত্রলীগের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। দেয়ালচিত্রের বাইরেও চার দিনের কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি।
জাকির বলেন, এবার আমাদের অঙ্গীকার হলো নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দেশব্যাপী কাজ করা। এবারও প্রতষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা অপরাজেয় বাংলা থেকে শাহবাগ হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শেষ হবে। সভাপতি জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শুরু হবে।
সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটার পর সকাল ১০টার দিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হবে শোভাযাত্রা।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে হবে রক্তদান কর্মসূচি। আর ৬ জানুয়ারি বিকালে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে শীতবস্ত্র বিতরণ ও পরে টিএসসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে ছাত্রলীগ। এছাড়া ৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় কলাভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হবে।
সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, এ সংগঠন শুধু ছাত্রসমাজের নয়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রিয় সংগঠন।
উল্লেখ্য, দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের জন্ম হয়। পাকিস্তান আমলেই ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয় এবং স্বাধীনতার পর নাম হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছয় দশকে সংগঠনটি পেরিয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ আর নব্বইয়ের দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সবকটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রতিষ্ঠালগ্নে নাইমউদ্দিন আহম্মেদকে আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরের বছর ১৯৪৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আরমানিটোলায় ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলনে দবিরুল ইসলাম সভাপতি ও মোহাম্মদ আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।