৫টি তদন্ত দল মাঠে খুনিরা কী লিটনের পরিচিত কেউ?
বিপ্লব বিশ^াস: গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বড় ভাই বলেছেন, হত্যাকারীরা যখন এসে এমপির খোঁজ করছিলেন তখন এমপি তাদের ভেতরে ডেকে নিয়েছিলেন এবং এমপি তাদের সঙ্গে কিছু সময় কথা বলেছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় এমপি হয়তো তাদের পরিচিত। তিনি আরও বলেন, তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছিল। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের সবারই মুখ মাফলার দিয়ে জড়ানো ছিল। মাত্র একজনের মুখ সামান্য খোলা ছিল, যা দেখে তার গায়ের রং ফর্সা মনে হয়েছিল। আগে কখনো এমপিকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিলো কিনা জানতে চাইলে এমপির বড় ভাই বলেছেন, এর আগে এমন কোনো হত্যার হুমকি আসেনি।
এই হত্যাকা-ের তদন্তে পিবিআইয়ের দুটি দল পুলিশের অপরাধ তদন্ত শাখার কর্মকর্তা (সিআইডি) এবং র্যাবের একটি অংশসহ মোট ৫টি তদন্ত দল কাজ করছে। এই তদন্তে দলীয় কোন্দল, জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততা, জঙ্গিবাদসহ মোট তিনটি দিক গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানা যায়।
গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলেছে, সুন্দরগঞ্জ এলাকায় জঙ্গিদের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো। ওই এলাকার কয়েকটি চরে জঙ্গিরা বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলে র্যাব-পুলিশ দাবি করে আসছিল। ওইসব চরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের আগে র্যাব-পুলিশকে তথ্য দিয়ে সংসদ সদস্য লিটন সার্বিক সহায়তা করেছিলেন। এসব কারণে এই বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে তদন্ত তদারক সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও পারিবারিক বিরোধকেও সামনে রাখা হয়েছে। তবে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গি ইস্যুকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, লিটন খুনের পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে মাঠে নামে একাধিক সংস্থা। র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ডিভিশনকে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম বিষয়টি তদারকি করছেন। কারণ এর আগে ঢাকায় সৌদি কূটনৈতিক খালাফ আল আলি হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচন করেছিলেন পুলিশের এই চৌকশ কর্মকর্তা। ওই হত্যাকা-টিও ছিল ক্লু-লেস। সংসদ সদস্য লিটন হত্যাকা-েরও কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। খুনিরা বাসার ভেতরে ঢোকার সময় তাদের দেখেছিলেন নিহত সংসদের শ্যালক বেদারুল আহসান। তিনিই ঘরের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু গুলির সময় তিনি পাশের ঘরে অবস্থান করছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী বেদারুল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে খুনিদের চেহারার বর্ণনা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে র্যাব ও সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ডিভিশন। তারা ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার সন্দেহভাজন কয়েকজনকে বিশেষ নজরদারিতে রেখেছেন। যদিও স্থানীয় পুলিশ ইতোমধ্যে ১৮ সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরাও ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। তারাও এ ঘটনার ছায়া তদন্ত করছেন।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, সিআইডির স্থানীয় সদস্যরা এ বিষয়ে কাজ করছে। ঢাকা থেকে তাদের সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে অনুমতি নিয়ে ঢাকার একটি টিমও ঘটনাস্থলে যেতে পারে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জামায়াত-শিবির এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। সিআইডির সদস্যরা তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতারের কাজ করছে।