অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান দিয়ে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে রাশিয়া, চিন্তিত ভারত
মাছুম বিল্লাহ: চীন ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে নজিরবিহীন উত্থান হয়েছে। চীনকে ৪টি অত্যাধুনিক সুখোই-৩৫ ফাইটার জেট সরবরাহ করেছে রাশিয়া। এই যুদ্ধবিমানটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সুখোই-৩০ ফাইটার জেটের আধুনিক ভার্সন। এ কারণে উদ্বিগ্ন ভারত। সাম্প্রতিক সময়ে পুরনো বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখন প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে চীন-রাশিয়ার।
চীনের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মির ওয়েবসাইট বলা হয়েছে, গত ২৫ ডিসেম্বর নতুন সুখোই ফাইটার জেটগুলো চীনকে সরবরাহ করেছে রাশিয়া। যুদ্ধবিমানগুলো দু’বছর আগেই বেইজিংকে সরবরাহ করার কথা থাকলেও এক বিশেষ কারণে টালবাহানা করছিল মস্কো। সেবছরই চীন ‘জে-২০ স্টেলথ ফাইটার জেট’-এর পরীক্ষামূলক উড্ডন শুরু করে। রাশিয়ার ভয় ছিল, চীনা যুদ্ধবিমানের সঙ্গে টক্করে তাদের ফিফথ জেনারেশন ফাইটার জেটগুলোর দাম কমে যাবে। তবে এখন আর সেই আশঙ্কা রইল না। রাশিয়া ও চীনের সম্পর্ক যে ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।
গত বছরের নভেম্বর মাসে জে-২০ প্রকাশ্যে আনে বেজিং। এটি এমনই ফাইটার জেট যা রাডারেও ধরা পড়ে না। ভারতের পক্ষে এই বিমান খুবই উদ্বেগের কারণ। এমনকি, চীনের জে-২০ যুক্তরাষ্ট্রও চিন্তিত। বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে স্টেলথ যুদ্ধবিমান তৈরি করে চীন। এই যুদ্ধবিমানের মারণ ক্ষমতা অনেক বেশি। বিমানে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা যায়। চীন ছাড়া একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই এ ধরনের স্টেলথ যুদ্ধবিমান রয়েছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়া ও ভারতের মতো বিভিন্ন দেশ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের পর্যায়ে রয়েছে। এই বিমানগুলো শত্রুপক্ষের রাডারে ধরা পড়ে। রাডার থেকে পাঠানো তরঙ্গ ওই বিমানগুলোতে পৌঁছায়, সেখান থেকে তা ফিরে আসে রাডারে। ফলে সংশ্লিষ্ট বিমানের অবস্থান, গতি ও উচ্চতা সম্পর্কে জানা যায়। কিন্তু স্টেলথ বিমানে রাডারের এই প্রযুক্তি কাজ করে না। এই বিমান নির্মাণের প্রযুক্তি গোপন থাকে। এ বিমানের দেহ বা বডি এক গোপন মিশ্র ধাতু দিয়ে তৈরি। এর আকারও সাধারণ বিমানের তুলনায় একেবারেই আলাদা। এর ফলে রাডার থেকে পাঠানো তরঙ্গ হয় রাস্তা বদলে অন্যদিকে চলে যায়, নতুবা বিমানের বডির ধাতু ওই তরঙ্গ শুষে নেয়। এর ফলে রেডার এড়িয়ে শত্রুপক্ষের ওপর হামলা চালাতে পারে স্টেলথ যুদ্ধবিমান।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক অবনতি হয়েছিল। ট্রাম্প আসার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। যে কারণে মার্কিন-রুশ সম্পর্কও ভবিষ্যতে আরও দৃঢ় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর ঠিক এরই আশঙ্কা করছে চীন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এক হয়ে গেলে চীনের বিপদ হবে। তাই চীন এখন চায়, যে কোনো উপায়ে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকতে। এ কারণেই রাশিয়ার বিমানগুলো পেতে তৎপর হয় বেইজিং। রাশিয়াও সুযোগ বুঝে দাম না কমিয়েই চারটি বিমান সরবরাহ করল চীনকে। সূত্র : জাগরণ ও ওয়ান ইন্ডিয়া । সম্পাদনা: এনামুল হক