মার্কেটে অগ্নি নির্বাপনের কোনো ব্যবস্থা ছিলো না সতর্ক করেছিলো ফায়ার সার্ভিস
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: গুলশানের ডিসিসি বা ডিএনসিসি মার্কেট ভবনে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ছিলো না। এনিয়ে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও মার্কেটের দোকান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ফায়ার সার্ভিস। তাদেরকে ২০১৬ সালের মধ্যে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়। ফায়ারের অনুমতি নেওয়ার জন্য বলা হয়। এই জন্য ফায়ার সার্ভিসের তরফ থেকে মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও দোকান মালিক সমিতিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। এমনকি আপদকালীন ব্যবস্থা হিসাবে বলা হয়েছিলো, কোনো কারণে আগুন লাগলে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সেই জন্য মহড়া করার ব্যাপারেও বলা হয়েছে। কিন্তু তাও করেনি দোকান মালিকরা। তারা বরং অর্থ ব্যয়ের বিষয়টিকে বড় করে দেখেছে। আর সিটি কর্পোরেশনও এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি তাদেরকে অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা করার জন্য ফায়ার সার্ভিস বললেও তাতে তারাও কর্ণপাত করেনি।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান পিএসসি বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশন ও দোকান মালিক সমিতি সবাইকেই বলেছি, আপনাদের ভবনে অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা নেই, সেই ব্যবস্থা করার জন্য। কিন্তু তারা তা করেনি। আমরা চিঠিও দিয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি। আমাদের জোনাল থেকেও অনেকবার বলা হয়েছে। নোটিসও দেওয়া হয়েছে। এখন ঘটনা ঘটনার পর তারা তাদের দোষ বলছে না। তাদের যে অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা নেই সেটা বলছে না। উল্টো এখন ফায়ার সার্ভিসের উপর দোষ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের উপর তাদের দোষ দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা আমাদের লোকজনের উপর দোষ দিয়েছে। কেবল তাই নয়, তাদেরকে মারধোর করেছে। এটাতো অন্যায়।
তাদের যে মার্কেট করা হয়েছে সেখানে ফায়ারের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। আমার প্রশ্ন, ফায়ার ছাড়পত্র না নিয়ে তারা এত বড় মার্কেট করে কিভাবে? নিয়ম হচ্ছে, একটি ভবন করার আগে যেসব সংস্থার অনুমতি নিতে হয় এরমধ্যে ফায়ার সার্ভিস একটি। তারা আমাদের কোনো অথরিটির ছাড়পত্র নেয়নি। আমাদের জোনাল অফিস বললেও তারা উদ্যোগ নেয়নি।
তিনি বলেন, গুলশানের ওই মার্কেটটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, সেখানে বাইরে থেকে ভেতরে পানি পৌঁছায় ওই ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আগুন লাগার পর বাইরে থেকে পানি দেওয়া হয়েছে। ওই পানি ভেতর পর্যন্ত পৌঁছায়নি। কারণ ব্যবস্থা নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে, এটা কি আমাদের অপ্রতুলতা নাকি অন্য কিছু। আসলে এখানে বলে রাখা প্রয়োজন ভবনটি এমন সব উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে যে ভবনের একাংশ ভেঙে পড়েছে। এই আগুনে ভবন ভেঙে পড়ার বিষয়টিও নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। কি মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ভবন তৈরি করা হয়েছে। আমরা খতিয়ে দেখবো কেন এই ভবনটি আগুনে ভেঙে পড়লো। ভেঙে পড়ার কারণেও একটি বাঁধা তৈরি হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য সমস্যা হয়েছে কিনা কিংবা বেগ পেতে হয়েছে কিনা এই ব্যাপারে ফায়ারের মহাপরিচালক বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতার জন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে নিতে সময় বেশি লেগেছে সেটা ওইভাবে বলা যাবে না। কারণ তাদের পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকলে আমরা পানি দিতে পারতাম। মার্কেটে পানির ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নয়।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছে, ফায়ার সার্ভিস অবহেলা করেছে এই কারণে সোমবার রাত থেকে আগুন শুরু হয়ে তা মঙ্গলবার পর্যন্ত জ্বলে। আবার এদিকে আগুন নেভানো হলেও অন্যদিকে জ্বলেছে এই ব্যাপারে ফায়ারের মহাপরিচালক বলেন, এখানে ফায়ারের অবহেলার কিছু নেই। কারণ এখানে সিটি কর্পোরেশন, দোকান মালিক সবাই আমাদের সেবা পাবে। আমরা তাদের কোনো পক্ষ নই। ফায়ারের অনুমতি না থাকার কারণে ওই ভবনের সব জায়গায় যে পানি পৌঁছানোর জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিলো তা হয়নি। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন