চীনা অর্থায়নের প্রকল্প বিশেষ সুবিধা পাবে
হাসান আরিফ: চীনের অর্থায়নে সব প্রকল্পই এখন থেকে বিশেষ সুবিধা পাবে। তাই চীনের ক্ষেত্রে সীমিত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হবে। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়াতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার ব্যাপক হারে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে চীনা অর্থায়নে কিছু সমস্যা রয়েছে। তাই চীনা অর্থায়নে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, সেসব প্রকল্পের ঠিকাদারির কাজ কোনো রকম দরপত্র আহ্বান করা ছাড়াই চীনা কোম্পানিকে দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়। এ শর্তের বিষয়টি নিয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে।
একই সূত্র জানায়, চীনের অনেক বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসার সুযোগ আছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে সরকার চীনকে একটি বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। একই সঙ্গে চীনের ইচ্ছায় তাদের পছন্দমতোই একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দেওয়া হবে। এতে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়বে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৬ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়গুলোর সিনিয়র সচিব ও সচিবদের অতি জরুরি এক পত্রে জানানো হয়, চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে সীমিত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হবে। তবে উভয় দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেমন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বা অন্যান্য বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সীমিত পর্যায়ে প্রয়োজনে ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি ব্যতিক্রম বিবেচনা করা যেতে পারে। এই সিদ্ধন্ত এখন থেকে চীনা অর্থায়নে নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, চীনা অর্থায়নে সরকার টু সরকার ভিত্তিতে চীনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এরইমধ্যে ডিপিএম পদ্ধতি অনুসরণের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বা চীনা দূতাবাসে লোন এপ্লিকেশন দেওয়া হয়েছে সে সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে আগের পদ্ধতিতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হবে।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, চীন প্রতিবছর বিদেশে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করে তার ১ শতাংশ বাংলাদেশে আনতে পারলে এটা বড় অর্জন। কমপক্ষে চীনের ১ শতাংশ এফডিআই বাংলাদেশে যাতে আসে, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে চীনের বিনিয়োগ আনতে আমাদের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়াতে হবে। অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও অবকাঠামোয় জোর দিতে হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক টেস্ট কেস হবে। চীন থেকে আমদানি বহুমুখী হচ্ছে। তবে আমাদের রপ্তানি বহুমুখী হচ্ছে না। চীন আমাদের বাজার সুবিধা দিলেও তা কাজে লাগাতে পারছি না। চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশে বাড়ছে, এটি ইতিবাচক দিক। তবে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের ৯০ শতাংশই হচ্ছে বস্ত্র খাতে।
গতবছর বাংলাদেশ-চায়না বিজনেস টক অ্যান্ড সাইনিং সেরিমনি অনুষ্ঠানে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা ১৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এই চুক্তিতে উভয় দেশের ২০টি প্রতিষ্ঠান স্বাক্ষর করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ১৩টি এবং চীনের সাতটি। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া, হিমায়িত মাছ এবং সামুদ্রিক খাবার আমদানি করবে।
বিশ্বের বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ চীন প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে নিজের চাহিদা পূরণে আমদানি করে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পণ্য। সেখানে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ৮৪ কোটি ডলার। অথচ চীন থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে। গত বছর চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৯০ কোটি ডলার। অর্থাৎ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। সম্পাদনা: এনামুল হক