ব্যাংকার্স সভায় গভর্নর ফজলে কবির ভালো গ্রাহকদের সুদে ছাড় দেওয়ার নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের
জাফর আহমদ: ১০ শতাংশ সুদ কমানোর যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই পালন করতে হবেÑ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকার্স সভায় গভর্নর ছাড়াও ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী ও এসএম মনিরুজ্জামান এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) উপস্থিত ছিলেন। সভায় চলতি ও নতুন মুদ্রানীতি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণের সার্ভিস চার্জ, হলমার্ক গ্রুপের অনুকূলে সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিল, ভালো গ্রাহকদের প্রণোদনা ও আগের ব্যাংকার্স সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠক সূত্র জানায়, কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের ঋণের প্রায় ১৬ থেকে ১৮ ধরনের চার্জ আদায় করছে ব্যাংকগুলো। লোন এপ্লিকেশন ফি, লোন প্রসেসিং ফি, ডকুমেন্টেশন ফি, সার্ভিস চার্জ, লিগ্যাল ফি, এপ্রাইসাল ফি, সার্ভে ফি, মর্টগেজ ফি, আর্লি সেটেলমেন্ট ফি, ব্যাংক গ্যারান্টি, মনিটরিং ফি, রিনিউয়াল ফি ইত্যাদি নামে চার্জ আদায় করে। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবি চার্জের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে কোনো কোনো ব্যাংক। এতে ঋণের কার্যকর সুদ হার ৪ থেকে ৬ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। তাই সার্ভিস চার্জ আদায়ের ৬টি খাত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
আমানত ও ঋণের সুদ হারের ব্যবধান স্প্রেড যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমানতের বিপরীতে যে পরিমাণে সুদ হার কমেছে ঋণের বিপরীতে সেই হারে কমেনি। এতে আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতরা উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গ্রাহক ঠকানো এই কৌশল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে হলমার্ক জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকগুলো সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিলের বিপরীতে গ্রাহকের অনুকূলে সৃষ্ট ফোর্সড লোনের বিপরীতে সুদ আদায় করবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া যেসব ব্যাংক পাওনা আদায়ে মামলা করেছিল ওই সব মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।
জানা গেছে, দেশের উন্নত ঋণ সংস্কৃতি গড়ে তোলা ও ভালো ঋণগ্রহীতাদের নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। গত ২০১৫ সালে আদায়কৃত সুদের উপর ১০ শতাংশ রিবেট দেওয়ার বিধান জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু মাত্র ৬টি ব্যাংক ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা রিবেট দিয়েছে এবং ১৬টি ব্যাংক রিবেট দেওয়ার জন্য ৫৭ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে। বাকি ৩৪টি ব্যাংক এখনো রিবেট দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ভালো গ্রাহকদের রিবেট দিতে ব্যাংকার্স সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হুন্ডির কারণে দেশের রেমিটেন্স আয় কমে যাওয়ার কারণে বৈদেশিক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়লেও বাজারে নগদ ডলারে সংকট দেখা দিয়েছে। নগদ ডলারের সংকট মেটাতে ডলার আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হুন্ডি বন্ধে ব্যাংকগুলোকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। সম্পাদনা: আনোয়ার