কলকাতা কুরুক্ষেত্র, কেজরিওয়াল বললেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদির বাসভবন ঘেরাওয়ের চেষ্টা তৃণমূলের
ইমরুল শাহেদ: তৃণমূল সংসদীয় দলের চেয়ারম্যান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দেন দিল্লিতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে। সেটা দেখাতে গিয়ে ৩২ জন সংসদ সদস্যকে পুলিশের হাতে হেনস্তা হয়ে তুঘলক রোডের থানায় যেতে হয়। সে সংবাদ কলকাতা পৌঁছাতেই শুরু হয়ে যায় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। শান্তিপূর্ণ মিছিল হয় যায় সহিংস।
হুগলির ডানকুনিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, বর্ধমানের অন্ডাল, আসানসোলের কুলটিতে পথ অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মীরা। কলকাতা পুলিশ সূত্রে বুধবার বলা হয়েছ, বুধবার জোড়াসাঁকো থানায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের নামে এফআইআর দায়ের করেছে। একইসঙ্গে বিজেপির নামও রয়েছে এই অভিযোগপত্রে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে বলেছে, সংসদ সদস্যদের মারধর করা ও থানায় নিয়ে যাওয়া এক ধরনের প্রতিহিংসার রাজনীতি।
আজকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রেসকোর্স রোডের বাসভবনের দিকে মিছিল করে যেতে থাকেন ৩২ জন সংসদ সদস্য। তারা সেøাগান তোলেন, ‘মোদি হটাও দেশ বাঁচাও।’ তাদের দাবি, রোজভ্যালি কা-ে বাবুল সুপ্রিয়কে গ্রেফতার করা হোক। প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা দেওয়া উচিত। কিন্তু মোদির বাসভবনের সামনে পৌঁছানোর আগেই, দিল্লি পুলিশ তাদের পথ আটকে দাঁড়ায়। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এরপরে পুলিশ তৃণমূল সংসদ সদস্যদের টেনে নিয়ে গিয়ে তাদের বাসে উঠিয়ে তুঘলক রোড থানায় নিয়ে যায়। আটক করে রাখে। এই প্রেক্ষিতে তৃণমূল সংসদ সদস্য সুখেন্দুশেখর রায়ের অভিযোগ, প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে মোদি সরকার। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছে তৃণমূল। সেই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকেই দমাতে চাইছে সরকার। প্রবীণ সংসদ সদস্য সৌগত রায়, কল্যাণ ব্যানার্জিকে অপমান করেছে দিল্লি পুলিশ। সৌগত রায় জানিয়েছেন, প্রসূন ব্যানার্জি এবং কল্যাণ ব্যানার্জিকে মারধর করেছে পুলিশ। তৃণমূলের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য ডেরেক ও ব্রায়েন বললেন, তৃণমূল শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিল। এই অবস্থায় তাদের উপর আক্রমণ হয়।
এই ঘটনার পর এবেলার খবরে বলা হয়েছে, কয়েকজন তৃণমূল নেতার প্ররোচণাতে দলের কর্মী-সমর্থকরা বিজেপি অফিসে গিয়ে হামলা চালান বলে অভিযোগ। তৃণমূলের বিক্ষোভ বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পরিণত হয়। বিজেপি অভিযোগ করে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার। তারা কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের দাবি তোলে। কিন্তু তৃণমূল নেতারা দাবি করছেন, বিজেপি কার্যালয়ের সামনে যে বিক্ষোভ হয়েছে, তা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের প্রতিবাদেই মানুষ সেখানে জমায়েত হয়, সেখানে কেন্দ্রের চাপেই কলকাতা পুলিশ এই অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিজেপি নেতারা রাজ্যপালের কাছে গিয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের দাবি তোলেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও অভিযোগ করেন, কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার সারদা-কা-ে তৃণমূলকে বাঁচিয়েছিলেন। তিনি এই হামলার ঘটনাতেও রাজ্যের শাসক দলকে রক্ষা করবেন বলেই আশঙ্কা তাদের। এবেলা উল্লেখ করে, আপাতত দুই দলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করে নিজেদের মান রক্ষা করল কলকাতা পুলিশ।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে নোট বাতিলসহ একাধিক ইস্যুতে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। পথেও নেমেছে রাজ্যের শাসক দল। কিন্তু দলনেত্রীর নির্দেশ মেনেই হরতাল, অবরোধের রাস্তায় হাঁটেনি তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পরে আপাতত দলীয় লাইন ভুলে গিয়েই অবরোধের রাস্তায় ফিরল তৃণমূল। এমনকি তৃণমূল বিধায়কের নেতৃত্বে কলকাতায় ট্রেন অবরোধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে তৃণমূল সংসদ সদস্য সুদীপ ব্যানার্জির গ্রেফতারের বিরোধিতা করে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সুদীপের গ্রেফতারিকে বিজেপির ‘প্রতিহিংসা পরায়ণ’ রাজনীতি বলে মন্তব্য করেছেন আপ প্রধান। বুধবার টুইটারে কেজরি লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নোট বাতিলকে সমর্থন না করার জন্যই তৃণমূল সদস্যদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তার কথায়, ‘এটা মোদিজির রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। তার বার্তা কেউ যদি বিমুদ্রাকরণের বিরোধিতা করে, তবে তাদের ছেড়ে কথা বলবে না সরকার। শোচনীয় অবস্থা।’