৬৯ বছরে ছাত্রলীগের ২৮ কমিটি মন্ত্রী হয়েছেন অনেকেই, দলত্যাগ ও বহিষ্কার হওয়া সভাপতি-সম্পাদকের সংখ্যা কম নয়
জাফর আহমদ: বাংলাদেশের পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠনগুলোর অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি হওয়ার পর থেকে ২৮টি পূর্ণাঙ্গ ও দুটি আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। ৬৯ বছরে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি থেকে নেতৃত্বের ধারবাহিকতায় অনেকেই দেশ পরিচালনার মতো মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আবার দলত্যাগ ও বহিষ্কারও হয়েছেন অনেকেই।
ছাত্রলীগের তথ্য অনুযায়ী ছাত্রলীগের প্রথম কমিটি ছিল আহ্বায়ক কমিটি। এ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন নাঈমুদ্দিন আহমেদ। সভাপতি দবিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খালেক নেওয়াজ খানের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়। এরপর বাংলাদেশে ছাত্রলীগের ইতিহাসে বহু দেশপ্রেমিক নেতার জন্ম দিয়েছে। এসব নেতা মন্ত্রী ও মূল সংগঠন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পর্যন্ত পালন করেছেন।
ছাত্রলীগের ইতিহাসে আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদসহ অনেকেই মন্ত্রী হয়েছেন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি থাকা ওবায়দুল কাদের একই কমিটির অন্য দায়িত্বে থাকা নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মূল দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল হক মণি, আ স ম আব্দুর রব, কাজী আরেফসহ আরও অনেকে। স্বাধীনতা যুদ্ধপূর্ববর্তী সময়ে ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব। স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে গণ্য করা হয় এই ‘নিউক্লিয়াস’। পর্যবেক্ষকরা বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক বক্তব্য দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ ভূমিকা রাখে।
স্বাধীনতা যুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার এদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রতীক শেখ মুজিবুর রহমানকে জেল থেকে বের করে আনতে ‘পাইওনিয়র ‘ভূমিকা পালন করে ছাত্রলীগ। এই আন্দোলনই বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের পথকে নির্ধারণ করে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেষে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুরকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। সদ্য জেল মুক্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু‘ উপাধি দেয় ছাত্রলীগ। এরপর এই ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি হয়ে ওঠে জাতীয় ঐক্য ও স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতীকে। পাকিস্তান সরকারের আতঙ্কও ছিল এই ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি।
ছাত্রলীগের ইতিহাসে কলঙ্কের তিলক পরানো নেতার সংখ্যাও কম নয়। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের দাবি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই সংগঠনের নেতাকর্মী হয়েও সেই সংগঠনের সাথে বেইমানি করেছে। ১১ কমিটির সভাপতি আ. রউফ, ১৩তম কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ, ১৬তম কমিটির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ও ২১তম কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিবকে বহিষ্কার করতে হয় সংগঠনটিকে। ছাত্রলীগের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে বিদেশ চলে যায় এক ছাত্র নেতা।
সপ্তম কমিটির সভাপতি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কেএম ওবায়দুর রহমান ও মনিরুল হক চৌধুরীর মতো দলত্যাগী নেতাও ছাত্রলীগে ছিলেন। ১০ম কমিটির সভাপতি ফেরদৌস আহমেদ কোরেশি ও ১৪তম কমিটির সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম দলত্যাগ করেন। তারা ছাত্রলীগের সভাপতির মতো দেশের বৃহৎ ও প্রাচীন সংগঠনটিকে পরিচালনা করলেও পরে ভিন্ন দলে চলে গেছেন। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করা এসব নেতা দুই জেনারেলের গড়া বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মন্ত্রী হয়েছেন। সম্পাদনা: হাসিবুল ফারুক চৌধুরী