আমিনুর রহমান তাজ ও রফিকুল ইসলাম: মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রশাসনের অবহেলায় দিন কাটিয়েছেন গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। বিশেষ করে, স্কুলছাত্র সৌরভ হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হওয়ার পর স্থানীয় এমপি লিটন কোণঠাসা হয়ে পড়েন। পুলিশ প্রশাসন তাকে খুব একটা পাত্তা দিত না। যে কারণে এমপি লিটনের নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশি মনোযোগী ছিলেন না পুলিশ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সৌরভ হত্যাচেষ্টা মামলার পর এমপি লিটনের লাইসেন্সকৃত পিস্তল ও শটগান সিজ করা হয়। এরপর অনেকটাই মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। পাশাপাশি পুলিশ প্রটোকল না পাওয়ায় এমপি লিটনের নিরাপত্তা দুর্বলতার সুযোগ নেয় খুনিরা। এদিকে হত্যাকা-ের ছয়দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের খুনিরা শনাক্ত না হওয়ায় সুন্দরগঞ্জ এলাকায় নিরাপত্তহীনতা বাড়ছে। পুলিশ দাবি করেছে, লিটন হত্যার পর তারা এ পর্যন্ত ৫৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু এই গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এমপির খুনিরা আছে কিনা সে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেনি তারা।
হত্যার মোটিভ এখনো রহস্যাবৃত। হত্যাকা-টি পারিবারিক বিরোধের জের নাকি জামায়াত শিবিরের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র কোনো কিছুরই কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের জেরে এ হত্যা কিনা তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে পুলিশকে। গতকাল পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তারা।
গাইবান্ধা জেলার অথিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম বলেছেন, খুনিদের শনাক্ত করার জন্য চেষ্টা চলছে। প্রতিদিনই সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করে খুনের সূত্র খোঁজা হচ্ছে। পুলিশ ইতোমধ্যে এমপি লিটনের মোবাইল ফোনের কললিস্ট সংগ্রহ করেছে। নিহত হওয়ার আগে লিটন কার কার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এদিকে এমপি লিটন হত্যার দিন তার বাড়ির সামনে অংশে পড়ে থাকা একটি কালো রংয়ের ক্যাপ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওইদিন বাড়ির সামনে মাঠে যারা ভলিবল খেলছিল তারাই ক্যাপটি কুড়িয়ে পুলিশকে দেয়। এই ক্যাপটির বর্তমানে ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, যে দুজন খুনি লিটনকে হত্যা করার জন্য ঘরের ভেতর প্রবেশ করেছিল তাদের গায়ে ছিল কালো রংয়ের জ্যাকেট এবং পরনে ছিল কালো প্যান্ট আর মাথায় কালো রংয়ের ক্যাপ। ধারণা করা হচ্ছে, গুলি চালিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঘাতকদের কারও মাথা থেকে ক্যাপটি পড়ে যায়। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশের পে প্রকৃত খুনিকে শনাক্ত করতে তা উল্লেখযোগ্য সূত্র হিসেবে কাজ করবে বলে পুলিশ মনে করছে। এদিকে লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি তার একমাত্র সন্তান রাতিনকে নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। সম্পাদনা: এনামুল হক