ভারতীয় রাজনীতির নয়া ‘ইন্দিরা গান্ধী’ কি এই নারী?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এমনভাবে ধাক্কা খাবেন তা ভাবতেই পারেননি মুলায়ম সিংহ যাদব। ভারতীয় রাজনীতিতে উত্তর প্রদেশের যাদবকুলের এই নেতাকে অত্যন্ত ধুরুন্ধর মানা হয়। কিন্তু, সেই মুলায়ম এবং তার শিবিরকে একাই ঘোল খাইয়ে ছাড়ছেন ডিম্পল যাদব। বলা হচ্ছে ডিম্পলের বুদ্ধির জোরেই উত্তর প্রদেশে বিধানসভা ভোটের আগে নিজের দুর্গ রক্ষা করতে পেরেছেন স্বামী তথা মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। এবেলা
ডিম্পলকে নিয়ে শুরু থেকেই ছেলের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন মুলায়াম। প্রথমে ছেলে অখিলেশের সঙ্গে কোনওভাবেই ডিম্পলের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না মুলায়ম। কিন্তু, অখিলেশ প্রায় গোঁ ধরেই সেনাকর্মীর মেয়ে ডিম্পলকে বিয়ে করেছিলেন। উচ্চশিক্ষিত ডিম্পল সবসময়েই স্বামী অখিলেশের সঙ্গে ঘরের বাইরে কাঁধে কাঁধ মেলানোর চেষ্টা করতেন। স্বামীকে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতেন। ঘর সংসার সামলানো থেকে অখিলেশের রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করতেন ডিম্পল। কার্যক্ষেত্রে দেখা যেত বাবা মুলায়মের সঙ্গে ছেলে অখিলেশের বহুক্ষেত্রে মতামতের অমিল থাকত। আর এসবের জন্য মুলায়ম, পুত্রবধূ ডিম্পলকেই দায়ী করতেন।
ডিম্পলের সঙ্গে মুলায়মের বিবাদের চোরা স্রোত আরও প্রগাঢ় হয় যখন ২০০৩ সালে অখিলেশের মা মারা যান। কারণ, এর কিছুদিন পরে জানা যায় প্রথম স্ত্রী থাকাকালীনই তলে তলে দ্বিতীয় সংসার গড়ে তুলেছেন মুলায়ম। এই গোপন সম্পর্কে তার একটি ছেলেও আছে। অখিলেশের মা মারা যেতেই মুলায়মের দ্বিতীয় স্ত্রী, সাধনা সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন রাজরানীর আসন পেতে।
অখিলেশকে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়ায় স্বামী মুলায়মের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধই হয়েছিলেন সাধনা। কিন্তু, যুবশক্তির প্রতিনিধি অখিলেশকে মুখ্যমন্ত্রী করলে সমাজবাদী পার্টির স্থায়ীত্ব যে আরও মজবুত হয়ে যাবে, মুলায়মের কাছে সে নিয়ে জোর সওয়াল করেছিলেন ডিম্পল যাদব। ডিম্পলের এই মতামতে আস্থা প্রকাশ করেছিল দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ। ডিম্পলের চালে যাঁদের ক্ষতি হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুলায়মের ছায়াসঙ্গী, তার ভাই শিবপাল সিংহ যাদব। মনে করা হয়েছিল মুলায়মের অনুপস্থিতিতে সপা থেকে শিবপালই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। স্বামী মুখ্যমন্ত্রী হতেই ডিম্পল যেন একের পর এক ষড়যন্ত্রের আঁচ পেয়েছিলেন। ঘরে বসে এই ষড়যন্ত্রের হাত থেকে স্বামীকে রক্ষা করা যে সম্ভব নয় তা বুঝেই যেন তিনি নেমে পড়েছিলেন প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে।
ডিম্পলের এই সিদ্ধান্ত যে কতটা বিচক্ষণের তা এখন টের পাচ্ছেন অখিলেশ। কারণ, ডিম্পল নাকি ২০১২ সালেই অখিলেশকে নিজের পরিবারের লোকেদের থেকে সাবধান করেছিলেন। সেসময় হেসে নাকি ডিম্পলের কথা উড়িয়ে দিয়েছিলেন অখিলেশ। কিন্তু, ২০১৬ সালের শেষে যাদবকুলে যে ধুন্ধুমার অশান্তি শুরু হয়েছে, তাতে অখিলেশ নাকি বুঝেছেন ডিম্পলের দূরদৃষ্টি কতটা শক্তিশালী। ডিম্পলই নাকি পইপই করে বলে দিয়েছিলেন অখিলেশকে, যতই পরিজন হোক লড়াইয়ের ময়দানে টিকে থাকতে হবে। মাথা নোয়ালে হবে না। তাই স্বামীকে সারাক্ষণ রাজনীতির প্যাঁচ-কৌশলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বলেছেন। আর ডিম্পল নিজেই নাকি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সব দলীয় কর্মীদের মধ্যে অখিলেশকে নিয়ে একের পর এক প্রচার চালিয়েছেন। যার জেরে বাপ-বেটার লড়াইয়ে উত্তর প্রদেশে নাকি এখন পাল্লা ভারী রয়েছে অখিলেশের দিকে। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ