১ জন কারাগারে, বাকী ৩ জন পলাতক গুলশান হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের মধ্যে ১৩ জন নিহত
আজাদ হোসেন সুমন: গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ১৩ জঙ্গি গত ৬ মাসে নিহত হয়েছে। বাকী রইলো ৪ জন। একজন কারাগারে আছেন। বাকি তিনজন হলেন রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও সাগর। পুলিশ এদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করছে। চিহ্নিত এই ১৭ জনের মধ্যে পাঁচজন গুলশান হামলায় সরাসরি অংশ নেন। এরা হচ্ছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাসটিকার ছাত্র মীর সামেহ মোবাশ্বের, মোনাশ ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসের ছাত্র নিবরাস ইসলাম এবং বগুড়ার শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। এরা সবাই পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত হন।
এছাড়া মাস্টারমাইন্ড তামিম, মেজর জাহিদ, তানভীর কাদেরী মারজান, রাজিবগান্ধি, বাশারুজ্জামানসহ বাকিরা হামলার পরিকল্পনা, সমন্বয়, প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র-বোমা সংগ্রহসহ বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত ছিলেন। পুলিশ বলছে, এরা সবাই নব্য জেএমবি’র সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ জানায়, তানভীর কাদেরী আজিমপুরে, মেজর জাহিদ মিরপুরের রুপনগরে, তামিম নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় এবং সর্বশেষ মারজান মোহামদপুরের বেড়িবাঁধে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযদ্ধে নিহত হয়। এছাড়াও ওই হামলার সঙ্গে যুক্ত আরো ৯ জন বিভিন্ন সময় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, মামলার তদন্তে এ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলেন, এদের মধ্যে রাজীব গুলশান হামলার জন্য সাগর ও বাশারুজ্জামান নামে ২ জঙ্গিকে নিয়োগ করেন। হামলার আগে ওই ২ জঙ্গি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তানভীর কাদেরীর ভাড়া করার বাসায় উঠে। সেখানে মাস্টারমাইন্ড তামিমের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে হামলায় যুক্ত জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ করেন। সাগর সীমান্তের থেকে আসা আগ্নেয়াস্ত্র গ্রহণ করে মারজানের কাছে পৌছে দেয়-পরবর্তি সময়ে ওই অস্ত্রই গুলশান হামলাকারীরা ব্যবহার করে। বাশারুজ্জামান মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ থেকে দুই দফায় হুন্ডির মাধ্যমে আসা ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করে। ওই ২০ লাখ টাকা গুলশান হামলায় ব্যয় করা হয়।
সূত্র জানায়, গুলশান হামলা তানভীর কাদেরীর বসুন্ধরা আবাসিক এলকার বাসায় বসে পরিকল্পনা করেন তামিম। ঘটনার আগে কমান্ডো অভিযানে নিহত ৫ জঙ্গি একাধিকবার হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ রেকি করে। তারা একাধিক দিন তানভীর কাদেরীর বাসায় গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। তামিমের সঙ্গে সার্বিক বিষয় সমন্বয় করে মারজান। এসব বিষয় পরে তদন্তে বিস্তারিত বেরিয়েছে। এছাড়াও আজিমপুরের আস্তানা থেকে গ্রেফতার বাশারুজ্জামানের স্ত্রী শায়লা আফরিন, মারজানের স্ত্রী প্রিয়তি ও তানভীর কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুন ফাতেমার কাছ থেকে পুলিশ নানা তথ্য উদ্ধার করেছে। যেসব তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অন্যান্য জঙ্গিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করছে। এ ব্যাপারে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি নেটওয়ার্ক এখন অনেকটাই আমাদের নিয়ন্ত্রণে। জঙ্গি দমনে পুলিশ এখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে মন্তব্য করে বলেন, যে কয়জন ধরা পড়েনি। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। আমরা তাদের খাটো করে দেখছিনা। কারণ এদের মধ্যে আত্মঘাতি জঙ্গিও আছে-যারা কোনো সময় যেকানোস্থানে হামলে পড়ে। তিনি জঙ্গিদের ব্যাপারে যার যার অবস্থান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম