বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের পাশেই জীবিত আবদুল কাদের মোল্লা!
রিকু আমির, টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) থেকে: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধের পাশেই আবদুল কাদের মোল্লার সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি জীবিত, গোপালগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা ও পেশায় ক্ষুদে ব্যবসায়ী। গতকাল রোববার সকালে তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়, বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের পূর্ব দিকে। সেখানে রয়েছে বেশকিছু দোকানপাট।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও ধর্ষণের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতা ফরিদপুরের রাজাকার আবদুল কাদের মোল্লা ওরফে কসাই কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১ মিনিটে। কাদের মোল্লার ফাঁসি ইস্যুতে দেশে যখন উত্তাপ ছিল তখনই ব্যবসায়ী কাদের মোল্লার নাম ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ী আবদুল কাদের মোল্লাকে রাজাকার কাদের মোল্লা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বলেন, যুদ্ধের সময় আমিও রাজাকারের ডরে পলাইয়া বেরাইছি। হেরে (রাজাকার কাদের) আমাগো শেখের বেটি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ফাঁসি দিবনা তো কারে দিব? ভালা করছে? হে বহুত মাইনষেরে মারছে।
ব্যবসায়ী কাদের মোল্লার সঙ্গে কথা বলার সময় এখানকারই ঝাল মুড়ি বিক্রেতা কিশোর বয়সী ইমরান আসেন চা পানের উদ্দেশ্যে। প্রবেশ করেই ইমরান কাদের মোল্লার উদ্দেশে, ডান হাত উঁচিয়ে জোর গলায় সেøাগান দেন, ‘কসাই কাদেরের ফাঁসি চাই, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই….’। কাদের রাসেলকে উদ্দেশ্য করে কৌতুক স্বরে বলেন, ‘রাজাকার কাদের মোল্লা একটাই আছিল, হেইটার ফাঁসি হইছে। ফাঁসিফুসি লইয়া আমার কোনো চিন্তা নাই….ধর চা খা।’
দৈনিক আমাদের অর্থনীতির প্রশ্নে কাদের হেসে বলেন, ওর মতন বহুত লোকে আমারে কসাই কাদের কয়, রাজাকার কয়, আমি চেতি (রাগ করি) না। কউক (বলুক)। ওরা মজা পায়, আমার ভাল্লাগে। তিনি বলেন, নামে কী হয়। কত মুজিব আছে, কত হাসিনা আছে, সবাই তো বঙ্গবন্ধু না, সবাইতো প্রধানমন্ত্রী না। ওবায়দুল কাদেরও তো আছে।
কিন্তু তাদের নাম তো দেশবিরোধী কারও নামের সঙ্গে মিল নেই। কিন্তু আপনার নাম তো একজন দেশবিরোধীর নামের সঙ্গে মিল আছে। এজন্য খারাপ লাগে কি-না- জানতে চাইলে কাদের হাসি দিয়ে বলেন, কী করুম, বাপ-মায় আদর কইরা নাম রাখছে। পারলে তো বদলাইয়া ফালাইতাম। সমস্যা নাই, কামই সব, নাম কিছুই না। এই দেহেন, বয়স তো কম হয় নাই, ৬৫ চলে, সামনের উপরের পাটির দুই দাঁত নাই, তাই আমি কলা খাই, আর কোনো উপায় নাই, পাখি পালি, ব্যবসায় কইরা খাই….।
টুঙ্গিপাড়া পাটগাতির সরদার পাড়ার বাসিন্দা কাদের বর্তমান স্থানে ব্যবসা শুরু করেন-৭ বছর আগে। তখন নাকি তিনিই ছিলেন এখানকার একমাত্র ব্যবসায়ী। এ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ৬০ টাহা বেচতাম ডেলি, দোকানেই ঘুমাইতাম রাইতে। আমার দোকানের পরে অইন্য সব দোকান হইছে। এহন তো আল্লায় দিলে ডেলি কমছে কম দুই হাজার বেচতারি। এইটা দিয়াই সংসার চালাই। জমিজিরাত নাই। এইবার ৮-১০ কাঠা জমি বর্গা লইছি।
স্ত্রী আরেফিয়াকে নিয়ে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ব্যবসায় করেন কাদের। আরেফিয়া রসিকতা করে দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, কাদের মোল্লার ফাঁসি একবারই হইছে..আমাগো কাদেরের ফাঁসি হইব না, এইটা একদম হাসা (সত্যি)। উনি আর কয়দিন পরে এমনেই মইরে যাইবে, ফাঁসি দিয়া মাইরবার লাইগবে নানি।
তার দোকানে চা-সিগারেট ও কনফেকশনারির মালামাল বিক্রি করা হয়। দোকানে রয়েছে পৃথক দুটো লোহার খাঁচায় আছে দুটো ভাটশালিক। কাদের বলেন, ছোট বেলা থেইকাই পাখি পালি। এখনও চারতে পারি নাই। ওগরে আমি মিঠু বইলা ডাকি। আরেকটা আছিল, কথা কইতে পারত, হাসত, গান গাইত, আমারে ডাকত, কানতো (কান্না করত)। ৮হাজার টাহায় বেচছি। এই দুইটাও নানা, আব্বা কইতে পারে। ছয় মেয়ে এক ছেলের বাবা কাদের এরই মধ্যে ৫ মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন করেছেন। আরেক মেয়ে নসুফা (১৫) বাড়িতেই থাকেন। ছেলে মোহাম্মদ এলাহি খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী, বিভাগ ব্যবসায় শিক্ষা। কাদেরের সঙ্গে কথা বলার সময় এলাহি দোকানেই ছিলেন। বাবা দুপুরের খাবার খেতে বাড়িতে গেলে তখন এলাহি আসেন।
বাবার নামের জন্য স্কুলে কোনো সমস্যা হয় কি-না জানতে চাইলে মুচকি হেসে এলাহি বলেন, আগে হইত, পোলাপান আমারে দেখলে কইত, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই, কসাই কাদেরের ফাঁসি চাই। এহন আর কয় না। তহন মন খারাপ কইরা অনেকদিন ক্লাসও করি নাই। ক্লাসে তো কিছু ফাউল পোলাপান থাকেই। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম