জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ২২ জেলার এমপিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা মন্ত্রী-এমপিদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা ডিসি-এসপিদের মৌখিক নির্দেশ
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: মন্ত্রী-এমপিদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। এরমধ্যে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের ১০ জেলাসহ জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ২২ জেলার মন্ত্রী-এমপিদের প্রতি বিশেষ নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র মতে, বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার পর সংসদ সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। গত সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকেই লিটন হত্যা জামায়াতের কাজ হতে পারে বলে ইঙ্গিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এমপি-মন্ত্রীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
জানা গেছে, এরপরই এমপিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের ১০ জেলাসহ জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত জেলার মন্ত্রী-এমপিরা বাড়তি নিরাপত্তার দাবি তোলেন বিভিন্ন ফোরামে। তারা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করেন। এমপিরা জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও হুইপদের বিষয়টি জানান। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করেন গত বুধবার রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্স ইনস্টিটিউট ও হল উদ্বোধনকালে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি আমলে নেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, লিটন হত্যার ঘটনায় উত্তররাঞ্চলসহ সারা দেশের ডিসি ও এসপিদের মন্ত্রী-এমপিদের নজরদারি বাড়ানোর মৌখিক নির্দেশ গেছে। তাছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী এমপিদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে জেলাগুলোর এমপিদের নিরাপত্তায় বাড়তি নজরদারির। বিষয়টি আমলে নিয়ে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে এবং তিনিও মনে করেন জামায়াত এসব হত্যাকা-ের হোতা। এমপিদের উদ্বেগের বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারের উচ্চ মহল থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী বিভিন্ন জেলায় মন্ত্রী-এমপিদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। যারা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের অবশ্যই বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এজন্য লিখিত নির্দেশের দরকার নেই।
স্বরাষ্ট্র সচিব ড. কামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, জনপ্রতিনিধিদের তাদের নির্বাচনি এলাকায় যেতে হয়। বিভিন্নভাবে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হয়। এজন্য জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কৌশল নির্ধারণের কাজ চলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী-এমপিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের বাসার নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যের সংখ্যা তিনজন থেকে বাড়িয়ে পাঁচজন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে চারজন থেকে বাড়িয়ে ছয়জন করা হয়েছে। সফর, জনসভাসহ ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক যেকোনো কর্মসূচির তথ্য আগে থেকেই পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে। যেসব জনপ্রতিনিধি বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন তাদের সার্বক্ষণিক গানম্যান দেওয়া ও পুলিশ এসকর্ট দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, গাইবান্ধায় এমপি লিটন খুন হওয়ায় নীলফামারী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বগুড়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট, ঝিনাইদহ, নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, পাবনা, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মধ্যে ১০ জেলার সব সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগতসহ সব ধরনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচনি এলাকায় সরকারি-বেসরকারি কর্মসূচিসহ বাসভবনে অবস্থান ছাড়াও সংসদ সদস্যদের চলাচল নিরাপত্তাও সার্বক্ষণিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। ৩ জানুয়ারি পুলিশ সদর দফতর থেকে উত্তরাঞ্চলের এ ১০ জেলার সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়। পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো ওই বার্তায় বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিরাপত্তার পরবর্তী ধরনটি নিশ্চিত করতে হবে।
রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞা বলেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে মৌখিক নির্দেশ এসেছে। স্থানীয়ভাবে থানার ওসিদের এমপিদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে কী ধরনের নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে তা বলা নিষেধ আছে। বিশেষ এলাকার বিশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে লোকাল থানার ওসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, স্থানীয় থানা থেকে আগের তুলনায় তাদের বেশি খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় থানার পুলিশদের বিশেষ সতর্ক বলে মনে হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) বেলায়েত হোসেন বলেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে বিশেষ কিছু নির্দেশনা পেয়েছি। এর মধ্যে মন্ত্রী-এমপি ও জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা হুমকি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতাসহ রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করতে বলা হয়েছে। সদর দফতরের নির্দেশনা পাওয়ার পর তল্লাশি-চৌকির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং মাঠপর্যায়ে পুলিশ কাজ করছে।