বাংলায় চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র লেখা উচিত ক্ষেত্র বিশেষে প্রেসক্রিপশন পড়ার উপযোগী করে লেখার নির্দেশ হাইকোর্টে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) পড়ার উপযোগী ও স্পষ্ট এবং বড় অক্ষরে লেখার হাইকোর্টের নির্দেশনাকে যথাযথ বলে স্বাগত জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা ও শিক্ষার কথা চিন্তা করে প্রয়োজনে ব্যবস্থাপত্র বাংলায় লেখা উচিত।
এমনকি চিকিৎসকদের মধ্যেও অনেকেই বলেছেন, রোগীর পড়ার উপযোগী করে না লিখলে স্বাস্থ্য সেবার বদলে একজন মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারেন।
নারী নেত্রী অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, শিক্ষিত মানুষরাই অনেক সময় ব্যবস্থাপত্রের দেওয়া ওষুধের নাম বলতে পারেন না। ফার্মেসীর লোকজনের কাছে গিয়ে জানতে হয়। কখনও কখনও ফার্মেসীর লোকজনও হিমিশিম খান চিকিৎসকদের লেখা পড়তে। আর কম শিক্ষিত এবং যারা কেবল পড়তে পারেন বিশেষ করে গ্রামের মানুষদের তো বোঝার সাধ্য নেই। তাই ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবস্থাপত্র বাংলায় করতে পারেন চিকিৎসকরা।
অধ্যাপক ডা. রাকিবুল হাসান লিটু বলেন, চিকিৎসকরা ইচ্ছে করে যে ব্যবস্থাপত্র লিখে থাকেন তা নয়। তবে রোগীদের কথা মাথায় রেখে তারা যেন বুঝতে পারেন সেভাবেই ব্যবস্থাপত্র লেখা উচিত। তিনি বলেন, গ্রাম থেকে তার কাছে যেসব রোগী আসেন তাদের তিনি ডায়াগনসিস এবং ব্যবস্থাপত্র ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন। তারা যদি ইংরেজিতে বুঝতে না পারেন তাহলে ব্যবস্থাপত্রে উল্টোপিঠে বাংলায় লিখে দেন। এটা মনে হয় অনেকেই করেন। আর যদি না করে থাকেন তবে এখন থেকে করা উচিত।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, তিনি রোগীর নাম এবং ডায়াগনসিসগুলো বাংলায় লেখার চেষ্টা করেন। যতটা সম্ভব স্পষ্ট অক্ষরে লিখে থাকেন। কারণ এটা একজন চিকিৎসকের নৈতিক দায়িত্ব। রোগী এবং রোগীর পরিবারকে ওষুধ এবং পথ্য সম্পর্কে স্পষ্ট করে না দিলে এই চিকিৎসার মূল্য থাকে না। তাছাড়া ওষুধের নাম বা পরীক্ষা-নীরিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে রোগীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা নিয়ে তার কোনো মন্তব্য নেই, তবে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র লিখতে নিজেদেরই সচেতন থাকা উচিত।
এদিকে গতকাল সোমবার পড়ার উপযোগী অক্ষর অথবা বড় হাতের অক্ষর অথবা ছাপা অক্ষর- এই তিনটির যে কোনো একটি পদ্ধতিতে প্রেসক্রিপশন লিখতে কেন সরকারকে নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং ওষুধের ব্র্যান্ড নাম না লিখে জেনারিক নাম কেন লেখা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে হাইকোর্ট থেকে। এ বিষয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিএমডিসির রেজিস্ট্রারকে সার্কুলার জারি করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
গত ২ জানুয়ারি হাইকোর্টে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর এক রিটের বিপরীতে এই নির্দেশনা দেন।
একই সঙ্গে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বিএমডিসির রেজিস্ট্রারকে এই সার্কুলার জারির বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
ঃধঢ়ধহ ঈধনরহবঃ ঝঝ ০৯০১১৭