ছেলে দুবাই থাকে, স্বেচ্ছায় ভিক্ষাবৃত্তিতে মা
ইসমাঈল হুসাইন ইমু: বড় ছেলে বিদেশে (দুবাই) থাকে। ছোট ছেলের খবর রাখেন না তিনি। স্বাধীনতার পর পর গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন পেটের দায়ে, স্বামী মারা গেছে বছর পাঁচেক আগে। বর্তমানে স্ব-ইচ্ছায় ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছেন আফিরুন্নেছা নামের এক মহিলা। বর্তমানে এটাই তার পেশা ও নেশা। গতকাল সোমবার বিকালে পান্থপথ স্কয়ার হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তায় এই মহিলা ভিক্ষুককে সুস্থ শরীর নিয়ে কেন ভিক্ষা করছেন জানতে চাইলে তেড়ে ওঠেন তিনি। বলেন, আমার বড় ছেলে দুবাই থাকে। আমি ঢাকাইয়া মাইয়া। ভিক্ষা দিলে দেন নইলে এত্ত কথা কন ক্যা ? বেশ কিছুক্ষণ পর ওই মহিলাকে দেখা যায় কাশবন রেস্তোরাঁর পেছনে একটি চা দোকানে বসে সিগারেট ফুঁকছেন।
স্থানীয়রা জানান, এই মহিলা অনেকদিন ধরেই এই এলাকায় থাকেন। কোনো বাসা বাড়ি আছে কি না কেউ জানেনা। তবে ওই মহিলার দাবি তার বাসা-বাড়িও রয়েছে। ইচ্ছে করেই এ পেশায় নেমেছেন তিনি। স্কয়ার হাসপাতাল থেকে পান্থপথ মোড় পর্যন্ত এই মহিলা ভিক্ষা করেন। কখনো বসে বসে নয়, পথচারী গাড়ি চালক, যাত্রীদের কাছে ভিক্ষা চান তিনি। তবে বেশিরভাগ সময় তাকে চা দোকানে আসা লোকজনকে বিরক্ত করতে দেখা গেছে।
স্থানীয় দোকানদাররা জানান, এখানে আরেকজন পঞ্চাশোর্ধ লোক রয়েছেন একই পেশায়। তারও পারিবারিক অবস্থা ভাল। একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ হাতে করে স্কয়ার হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করেন। এই লোকের টার্গেট সকল মহিলা। পুরুষ লোকদের কাছে হাত নেড়ে ভিক্ষা দাবি করলেও মহিলাদের দেখলেই কাছে গিয়ে কখনো গায়ে হাত দিয়ে ভিক্ষা চান। এতে অনেক মহিলাকে ভয় পেয়ে দৌড় দিতে দেখা গেছে। স্থানীয় একটি আবাসিক বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী জানান, এই লোকটিও দীর্ঘদিন ধরে এখানে ভিক্ষা করছেন।
শুধু এই দুজন নয়, রাজধানীর অলিগলিতে এমন এলাকাভিত্তিক ভিক্ষুক ক্রমেই বাড়ছে। এছাড়া রাস্তার মোড়ে মোড়ে আর মসজিদভিত্তিক ভিক্ষুকতো রয়েছেই। শুক্রবার নামাজের আগে রাজধানীর বড় মসজিদ থেকে শুরু করে প্রায় সকল মসজিদের সামনে শত শত ভিক্ষুক লক্ষ্য করা যায়।
এদিকে সিটি করপোরেশন ও ডিএমপির উদ্যোগে বেশকিছু এলাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। কিন্তু ওইসব এলাকায়ও মাঝেমধ্যে ভিক্ষুকদের উৎপাত লক্ষ্য করা যায়।
ভিক্ষুকদের নিয়ে কাজ করে একটি বেসরকারি সংগঠন জানায়, অক্ষম, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক মানুষ আয়ের কোনো বিকল্প পথ না পেয়ে সহায়-সম্বলহীন মানুষগুলো বাধ্য হয়ে সাধারণত ভিক্ষাবৃত্তি করে থাকে। তবে রাজধানীতে এ চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে অসাধু মানুষের ভিক্ষাবৃত্তি একটি রমরমা ‘ব্যবসা’। আর এ অসাধু ব্যবসা পরিচালনায় রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এদের চাঁদা না দিয়ে রাজধানীতে ভিক্ষা করা সম্ভব না। অভিযোগ রয়েছে, ওই সংঘবদ্ধ চক্র জোর করে অনেককে ভিক্ষাবৃত্তি করিয়ে থাকে।
ভিক্ষুকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা: ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১’-এর তৃতীয় অধ্যায়ের ৯ (১) ধারায় ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিতদের আটক করার বিধান রাখা হয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়ের ২৪ ধারায় বলা হয়েছে, ভিক্ষাবৃত্তি কাজে নিয়োজিত কোনো ভবঘুরেকে আটক করা হলে তার পাশাপাশি যে ব্যক্তির প্ররোচণা বা প্রভাবে সে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত তার বিরুদ্ধে পেনাল কোড, ১৮৬০, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৬-সহ অন্যান্য আইনের বিধানগুলো প্রয়োগযোগ্য হবে। তবে রাজধানীর এসব ভিক্ষুকদের আটকের চিত্র তেমন একটা চোখে পড়ে না। শুধুমাত্র ভিআইপি এলাকায়ই পুলিশকে সতর্কাবস্থায় থাকতে দেখা যায়। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু