বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ফরাস উদ্দিন কমিটির রিপোর্ট চেয়েছে জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি
হাসান আরিফ: জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে ড. ফরাস উদ্দিন কমিটির রিপোর্ট চেয়েছে। একই সঙ্গে কমিটির সব সদস্যকে রিপোর্ট সরবরাহ করতেও বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত ৪ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দিয়ে এই বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। ওই চিঠির সূত্রেই এসব তথ্য জানা গেছে। জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির ৩০তম বৈঠকে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে ড. ফরাস উদ্দিন কমিটির রিপোর্ট অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। এখন জাতীয় সংসদকেও ওই রিপোর্ট দিতে হবে।
এ বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। অর্থমন্ত্রী ঢাকার বাইরে আছেন আর সচিব বিদেশে রয়েছেন। তারা আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে গত বছরের ১৪ নভেম্বর ৪৮৮ দশমিক ২৮ মিলিয়ন ফিলিপাইন পেশো এবং ১৫ নভেম্বর ৪ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, নিউইয়র্কে জমা হয়েছে।
জানা গেছে, সরকার গঠিত ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে রিজার্ভ চুরির ঘটনা উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে জড়িতদের নাম।
তদন্ত প্রতিবেদন ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে ড. ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্তকারী দলের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছয়জনের নাম এসেছে। এরা হলেন অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা, উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, জিএম আব্দুল্লাহ ছালেহীন, শেখ রিয়াজউদ্দিন, রফিক আহমেদ মজুমদার ও গভর্নর সচিবালয় বিভাগে কর্মরত মইনুল ইসলাম। এদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং অবহেলার কারণে সার্ভার হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে কিংবা তারা হ্যাকারদের সহায়তা করেছেন এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
গভর্নর সচিবালয় বিভাগে কর্মরত মইনুল ইসলাম এবং অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের শেখ রিয়াজউদ্দিন তাদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ‘কমপ্রোমাইজড’ হয়েছে কিংবা ব্যবহার হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয় জুবায়ের বিন হুদা ও জি এম আব্দুল্লাহ ছালেহীনের ইউজার আইডির পাসওয়ার্ড চুরি করে তা ব্যবহার করেছে হ্যাকাররা। এমন কি এই দুজন আগেই জানতে পারেন তাদের পাসওয়ার্ড চুরি হয়েছে। কিন্তু তারা সেটা আমলে নেয়নি। এতে তারা দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করেছেন। কা-জ্ঞানহীনের মতো কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ফরাস উদ্দিন বলেন, রির্জাভ চুরিতে সুইফটেরও দায়-দায়িত্ব আছে, সম্পূর্ণ দায় বা মূল দায় তাদের কি না, সেই বিশ্লেষণও প্রতিবেদনে আছে। সুফইট কখনো দায় এড়াতে পারে না। তবে সুইফটের সাহায্য নিয়েই আমদের ভবিষ্যতের সমস্যাটা সমাধান করতে হবে। চুরি যাওয়া টাকার মধ্যে কতটা আদায় করা সম্ভব- তার একটা চিত্রও প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ১০ লাখ ডলার ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ফিলিপিন্স ও শ্রীলংকা দুটি ব্যাংকে সরানো হয়েছিল ভুয়া বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে। একইভাবে শ্রীলংকায় ২ লাখ ডলার সরানো হলেও শেষ মুহূর্তে তা আটকানো হয়। এর পর গত ১৫ মার্চ ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। এ কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব গকুল চাঁদ দাস। সম্পাদনা: এনামুল হক