রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলার নির্দেশ : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি সভা
আনিসুর রহমান তপন: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ ক্ষতি করতে পারে এমন আশঙ্কায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন জেলার জনগণের সঙ্গে মিশে গিয়ে রোহিঙ্গা যাতে অবৈধ উপায়ে পাসপোর্ট তৈরি করতে না পারে সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয় সভায়।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নতুনভাবে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। মানবিক কারণে সরকার কক্সবাজারের টেকনাফসহ আশপাশের এলাকায় তাদের আশ্রয় দিয়েছে।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী ও বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের আলোকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে সে বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সভায় জানানো হয়, যেসব রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে, তাদের অনেকেই বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে মিশে গেছে। যে কোনো সময় তারা কক্সবাজার ও আশপাশের জেলার আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্য তাদের একটা নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে রাখা প্রয়োজন। একই সঙ্গে তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে কিনা সেটাও যাচাই করা প্রয়োজন। সীমান্তবর্তী এলাকা টেকনাফসহ আশপাশের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে অবনতি ঘটাতে না পারে এজন্য উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রাখা, কোনো রোহিঙ্গা যেন এখানে জমি কিনতে না পারে, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয় সভায়। প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের গ্রেফতারের পর ফরেনার্স অ্যাক্ট-১৯৪৬’র বিধি মোতাবেক মামলা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরামর্শ দেওয়া হয় বৈঠকে।
গত ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘের হিসাবে ৯ অক্টোবরের পর থেকে ২০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। আর হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাবে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সম্পাদনা: এনামুল হক