স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে দুই সন্তান হত্যার পর আত্মহত্যা করেন আনিকা
মাসুদ আলম: খাবার নিয়ে বকাঝকা করায় অভিমান করে দুই সন্তানকে হত্যার পর নিজেও আত্মহননের পথ বেছে নেন আনিকা বেগম। এমন ধারণার কথা পুলিশকে জানিয়েছেন আনিকার স্বামী শামীম হোসেন। এছাড়া মৃতদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধারের পর এ সন্দেহ আরও ঘনিভূত হয়।
এদিকে শামীমকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আনিকার মা নাদিরা বেগম মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ বলছে, শামীমের আয় দিয়ে সংসার চলত না। অভাবের সংসারে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো, আবার ঠিকও হয়ে যেত। ঘটনার দিন সকালেও আগের দিনের ভাত গরম করে দেওয়ায় শামীম তার স্ত্রী আনিকাকে বকাঝকা করে। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরেই আনিকা আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশের ধারণা।
প্রতিবেশী ফাতেমা বেগম বলেন, প্রায় দেড়বছর আগে ছোট দিয়াবাড়ির টিনশেড বাসাটি ভাড়া নেয় শামীম ও আনিকা দম্পতি। আমি তাদের পাশের রুমে ১০ বছরেরও বেশি ছিলাম। এখন পাশেই আরেকটি বাসায় থাকি। মেয়ে শামিমা ও ছেলে আবদুল্লাহ (৩) সারাদিন আমার বাসায় থাকত খেলত। শামীমের আয় দিয়ে সংসার চলত না। খুব কষ্টে তাদের সংসার চলছিল। এই দম্পতির মধ্যে তেমন মারামারি বা ঝগড়া হতে দেখিনি। তবে সংসারের মধ্যে ঝগড়া হতেই পারে। তবে শামীমের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিল আনিকা। আগের স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়েছে বলে শুনেছি। তবে শামীমের মা-বাবা তাদের বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। আনিকা আত্মহত্যা করেছে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।
আরেক প্রতিবেশী বলেন, একদিকে সংসারে অভাব,
আরেকদিকে ঝগড়া বিবাদ এ কারণেই আনিকা আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। ঘটনার দিন সকালে আগের দিনের ভাত গরম করে ও ডিমভাজি দিয়ে তাকে খেতে দেন আনিকা। এ সময় স্ত্রীর সঙ্গে শামীমের ঝগড়া হয়। স্ত্রীকে প্রথমে বাজে কথা বলেন শামীম। এরপর স্ত্রীর মাকে উদ্দেশ্য করে বকা দিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান। দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুকুল আলম বলেন, নিহত আনিকার মা শামীমকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছে। এ ঘটনায় শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও চিরকুটের সূত্রধরে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে আনিকা তার স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছেন।
নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে আনিকার মামা ইসরাফিল হোসেনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল শামীমের দুদিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। কিন্তু মামলার মূল নথি আদালতে না থাকায় ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক প্রণব কুমার ভূই শুনানির জন্য আজ বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন।
আনিকার চিরকুট: ‘শামীম তোমার একটা ভুলের জন্য এতবড় ঘটনা, তুমি ভেবেছ আমি শুধু শুনব তা। তুমি সবার কথা ভাবো আমাদের কথা ভাবো, আমি সবাইকে ছেড়ে যাচ্ছি। থাকব না, পৃথিবী ছেড়ে আর বলেছিলাম না, আমি যেখানে ওরাও সেখানে একটাই কষ্ট মা ভাই বোন নানি আর অনেকের (অনেকের) মুখ দেখতে পালাম (পারলাম) না। ছেলে মেয়ে নেয়ে (নিয়ে) গেলাম সবাই ভালো থাকো। চিরকুটে আনিকা আরও লিখেছেন, ‘আমি এই দুই হাত দিয়ে ওদের খাওয়াছি (খাওয়াইছি), তেল দিছি আর আজ আমি সেই হাত দিয়ে মারলাম আমাক (আমাকে), তোমারা মাপ করে দেও (দিও), আমাদের কপলে (কপালে) এ ছিল ওরা দুই জন নিষ্পাপ, আমার মৃত্যুর জন্য কেও (কেউ) দাই (দায়ী) না। ইতি আনিকা, শামিমা, আব্দুল্লাহ। বুধবার নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, দারুস সালামে নিহত দুই শিশুর শ্বাসনালী কেটে হত্যা করা হয়েছে। শিশু দুটির গলার শ্বাসনালী কাটা ছিল। তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার করা হয়েছে। নিহত ওই দুই শিশুর মায়ের গলায়ও একটি দাগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা জন্য ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। মরদেহের সুরতহালের প্রতিবেদন তৈরি করেন এসআই মো. নেওশের আলী। আনিকার মামা ইসরাফিল হোসেন বলেন, আনিকাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে শামীম। এছাড়া প্রায়ই আনিকাকে গালমন্দ করা হতো। তিনি শামীমের শাস্তি দাবি করেন। তবে আনিকা জেদি ছিল। সম্পাদনা: ইসমাঈল হুসাইন ইমু