জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আশা করছি সব রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে। দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহায়তা করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে গঠিত নির্বাচন কমিশনের উপর সব রাজনৈতিক দল আস্থা রাখবে বলে জানান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ ভাষণ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে গঠিত নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা রাখবেন এবং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আমরা জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কারণ আমরা সবসময়ই সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। সংবিধানের আওতায় আমরা সবধরনের ছাড় দিতেও প্রস্তুত ছিলাম। এমনকি বিএনপি যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী, তাও দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিএনপি নেত্রী সে আহ্বানে সাড়া দেননি বরং উনি সন্ত্রাসীবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেন। পেট্রল বোমা, অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলা করে মানুষ হত্যায় মেতে উঠলেন। শতাধিক মানুষ হত্যা করলেন। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করলেন তিনি। তাদের বর্জন ও প্রতিহতের হুমকির মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয় নিয়ে ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জোট নির্বাচন বর্জন করলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দল এবং প্রার্থীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরের বছর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলনে নাশকতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ৯২ দিন পার্টি কার্যালয়ে আরাম-আয়েশে অবস্থান করে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আন্দোলনের নামে বিএনপি নেত্রী আবার জ্বালাও-পোড়াও-সন্ত্রাসী কর্মকা- উসকে দেন। দেশবাসী তাদের এ সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রত্যাখ্যান করেছেন, জনগণ এ ধরনের কর্মকা-ের পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না।
শেখ হাসিনা বলেন, আট বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকারও বেশি। যা জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৪তম এবং ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩২তম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বিশ্বকে অবাক করে দিচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে পুরো বিশ্বকে আমরা তাক লাগিয়ে দিয়েছি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। আগামী বছরের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকের অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ-এশিয়ার এবং নিম্ন-আয়ের দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৯তম ও ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হবে।