ইসলামী ব্যাংককে রাজনীতি নয়: আরাস্তু খান
হাসান আরিফ: ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকে রাজনীতি করা চলবে না, এমনকি বিএনপিও করা যাবে না। যদি কারও সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকে, সেটা মেনে নেওয়া হবে না। কারণ, এ প্রতিষ্ঠানে তিনি পেশাদারদের চান। এছাড়া ব্যাংক থেকে কারও চাকরি খাওয়ার ইচ্ছে নেই। সবাইকেই এ কথা বলা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল হামিদ মিঞার নেতৃত্বাধীন একটি দল গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। গত ৫ জানুয়ারি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম বৈঠকে ব্যাংকের ‘পারফরমেন্স নিয়ে’ কথা হয়েছে বলে সাবেক সচিব আরাস্তু খান জানান।
বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকা না থাকার বিষয়ে তো কোনো নীতিমালা নেই সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আরাস্তু খান বলেন, হ্যাঁ, সবাই তো ভোট দেন। যে-কেউ যে-কাউকে ভোট দিতে পারেন। কেউ চাইলে বিএনপিকেও ভোট দিতে পারেন। ব্যাংকে সঠিকভাবে কাজ করলে কারও কোনো সমস্যা নেই। ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ সম্পূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ। কারও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
ইসলামী ব্যাংক থেকে কাউকে ছাঁটাই করা হবে না এই আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, তিনি তাদেরকে নিশ্চিত করেছেন, তাদেরকে বলেছেন, খুঁজে খুঁজে কারও চাকরি খাওয়ার ইচ্ছা নাই। এটা খুবই ভাল ব্যাংক। পারফরমেন্সও ভাল।
রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত আছেন এমন কাউকে কি চিহ্নিত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এমন চিহ্নিত করা আমি পছন্দ করি না। ব্যাংক চলবে প্রফেশনাল পদ্ধতিতে। তবে ব্যাংকের কেউ সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বলতে কী বোঝাচ্ছেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আরাস্তু খান বলেন, সম্পৃক্ততা বলতে যদি দেখা যায়, পলিটিক্যাল অ্যাসপিরেশন আছে, আমরা এটা চাই না। আপনারা পেশায় আছেন, আপনাদেরকে পেশাদার হিসাবে কাজ করতে হবে। এটা রাজনৈতিক কিছু না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চেয়ারম্যান বলেন, আপনি ভোট দেন, আপনি বিএনপিকে ভোট দিতে পারেন, আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে পারেন। সেটা করার অধিকার আপনার আছে। এটা আপনার পেশায় প্রতিফলন করতে পারবে না। সে যদি প্রোপার কাজ করে, তার কোনো ভয় নেই। এই ব্যাংকে যে কর্মকর্তারা আছেন, তাদের একনিষ্ঠতা ও সততা সম্পর্কেতো আমার বলতে হবে না। আপনারা সেটা ভালো জানেন। সেটা ভালো। আমরা আগামী বছরের জন্য আরও ভাল টার্গেট দিয়েছি।
আরাস্তু খান বলেন, উইচ হান্টিং আমি পছন্দ করি না, আনলেস আই ফাইন্ড সামথিং রং।
এই অগ্রগতি কোনোভাবে থমকে যাওয়ার সুযোগ আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নো নো, আমাদের শেয়ার মার্কেটের পরিস্থিতি দেখেন প্রিটি গুড। দেশে-বিদেশে আমাদের যারা বিনিয়োগকারী রয়েছেন, আমরা তাদের আমানত প্রোটেক্ট ও প্রিজার্ভ করব।
মালিকানা, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় কয়েক ধাপে পরিবর্তন আনার মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ২৪০তম সভায় সরকারের সাবেক সচিব আরাস্তু খানকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যে দায়িত্ব আগে পালন করে আসছিলেন জামায়াত ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ইবনে সিনা ট্রাস্টের মুস্তাফা আনোয়ার। চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও ব্যাংকটির পরিচালক ও ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন মুস্তাফা আনোয়ার। পদত্যাগ করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল মান্নানও।
বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১ হাজার ৬১০ কোটি টাকা; আর বাজার মূলধন চার হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ৩১৫ কোটি।