একান্ত সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু জিয়াউর রহমানের সঙ্গে অসম্মানিত আচরণকে আগামী নির্বাচনে ইস্যু করবে বিএনপি
শায়েখ হাসান: সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে শহীদ জিয়াউর রহমানের যে সম্মান পাওয়া প্রয়োজন ছিল, তা তো দেওয়া হয়নি বরং তার সঙ্গে চরম অসম্মানিত আচরণ করা হচ্ছে। বিষয়টিকে আগামী নির্বাচনে ইস্যু করবে বিএনপি। দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু একথা বলেন। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানের নামকরণে পরিবর্তন, বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া, নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন নিয়ে সংলাপÑ প্রভৃতি বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন স্থান এবং স্থাপনার নাম পরিবর্তনের বিষয়গুলোর বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি। এক্ষেত্রে আপনাদের দলীয় অবস্থান কীÑ এ প্রশ্নের জবাবে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে শহীদ জিয়াউর রহমানের যে সম্মান পাওয়া প্রয়োজন ছিল, তা তো দেওয়া হয়নি বরং তার সঙ্গে চরম অসম্মানিত আচরণ করা হচ্ছে। এটিকে আমরা আগামী নির্বাচনে ইস্যু করব। এ বিষয়ে আমরা জনগণের মনোভাবও জানতে চাই। তবে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে ঢাকার নাম পরিবর্তন করে জিয়া সিটি রাখা হবে। সম্প্রতি পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার নাম পরিবর্তন করে ইন্দুরকানি রেখেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কাছে জিয়াউর রহমানের চেয়ে ইন্দুরকানিই বেশি পছন্দের। শুধু তাই নয়, তারা ক্ষমতায় আসার পর দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতীয় নেতাসহ অনেকের নাম পরিবর্তন করেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সেসব নাম আবার প্রতিস্থাপন করবে। ঢাকার নাম পরিবর্তন করা হবে জিয়া সিটি।
তিনি বলেন, সরকারের উচিত গোপালগঞ্জের নাম মুজিবনগর করা। কারণ গোপালের চেয়ে মুজিব অনেক বড়। আওয়ামী লীগ সরকার এটা না করলেও বিএনপি সরকারে গেলে তারাই এটি করবে। মুজিবের চেয়ে কি গোপাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়ে গেলেন? আমরা ক্ষমতায় গেলে প্রস্তাব দেব গোপালগঞ্জের নাম মুজিবনগর করার।
৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। অনুমতি না পাওয়ার বিষয়ে বিএনপির মনোভাব কীÑ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সভা-সমাবেশ সব রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। বর্তমান সরকার সংবিধানের কথা বলে, গণতন্ত্রেরও কথা বলে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তারা সংবিধানকেও লঙ্ঘন করে, গণতন্ত্রকে অস্বীকার করে। এর প্রতিফলন হচ্ছে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি না দেওয়া। বর্তমান সরকারের গণতন্ত্র-প্রীতি আছে, কিন্তু গণতন্ত্রের চর্চা তারা করে না। তারা গণতন্ত্রের মায়াকান্না করে, কিন্তু গণতন্ত্রের মূল কাঠামো তারা অস্বীকার করে। এটি খুব দুঃখজনক। আমরা জানি গণতন্ত্রের সঙ্গে যারা প্রতারণা করেছে, যুদ্ধ করেছেÑ তারা সবসময়ই পরাজিত হয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোনো সরকার নেই যারা গণতন্ত্রের সঙ্গে প্রতারণা, যুদ্ধ করে বা গণতন্ত্রকে অস্বীকার করে টিকে থেকেছে। বর্তমান সরকারের পক্ষেও এই একই পরিণতি হবে।
আগামীতেও এ ধরনের সমাবেশের অনুমতি না পাওয়া গেলে বিএনপির বিকল্প কোনো ভাবনা থাকবে কি নাÑ জানতে চাইলে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের যদি ঘর থেকে বের হতে না-ই দেয়, তাহলে বিকল্প চিন্তা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলে কী দেখবোÑ ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করার পরও পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান সরকারের প্রতারণামূলক ভূমিকার কারণে আমরা যুদ্ধ করেছি। স্বাধীনও হয়েছি। আর গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে অধিকার যখন হরণ করা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষ গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিশ্বাসের ভিত্তিতে লড়াই করে। এটি সংগ্রাম হতে পারে, বুদ্ধিবৃত্তিক হতে পারে। মোট কথা, বিরোধিতা বা সংগ্রামটা বিভিন্নভাবে হতে পারে। স্বাভাবিক কারণেই সরকার যদি আমাদের (বিএনপি) সভা-সমাবেশ করার অনুমতি না দেয়, তখন আমাদের তো বিকল্প পন্থা বের করতেই হবে।
ইসি পুনর্গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে গেছে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনাও দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কীÑ এ প্রশ্নের জবাবে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ২০০৫ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় তখন আওয়ামী লীগ বলেছিল তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই আমরা নির্বাচন কমিশন করেছি। তারা বলেছিল ‘আজিজ মার্কা কমিশন’। কিন্তু সত্য হচ্ছে, ওই কমিশনের অধীনে কিন্তু নির্বাচন হয়নি। আওয়ামী লীগ এ ধরনের কথার পাশাপাশি আলোচনার কথা বলেছে। কিন্তু তারা ক্ষমতায় আসার পর তাদের বিরোধী দল হিসেবে বক্তব্যের প্রতিফলন তারা করেনি। এমনকি বিভিন্ন সময়ে আলোচনার কথা বলেও তারা কথা রাখেনি। বাস্তবতা হচ্ছে, বিরোধী দলে থাকলে আওয়ামী লীগ সবসময় গণতন্ত্রের পক্ষে থাকে, সরকারি দলে এলে স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করে। ইসির ক্ষেত্রে তারা যদি ওইভাবে যায়, তাহলে তা দুঃখজনক হবে। এতে কোনো মীমাংসা আসবে না। আমরা চাইব স্বাধীনতার প্রায় অর্ধ শতাব্দী সময় পরে এখন একটি সুষ্ঠুধারায় আমাদের সকলেরই ফিরে আসা উচিত। তা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন গঠনে আমরা সেই ধারা চালু করতে পারি।
প্রসঙ্গত, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদপূর্তি হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। এরপর যে কমিশন দায়িত্ব নেবে, তাদের অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে। এফএ। সম্পাদনা: হাসিবুল ফারুক চৌধুরী