গত ৬ মাসে দেশের বিভিন্নস্থানে ৮ সন্তানসহ ৪ মায়ের আত্মহত্যা
আজাদ হোসেন সুমন: মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ৪ মা নিজেদের ৮ সন্তানসহ আত্মহত্যা করেছে। এছাড়াও রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় এক মা ২ সন্তানসহ নিজে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে-এই ঘটনায় মারা গেছে আরিয়া নামের দেড় বছরের শিশু। মা ও আরেক সন্তান ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে।
গত ১২ জুলাই ঝালকাঠির রাজাপুরে স্বামীর সাথে অভিমান করে দুই সন্তানকে নিজ ঘরের ফ্যানের সাথে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নিজেও ওই ফ্যানের সাথেই ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন শিউলী বেগম (৩০)। এ ঘটনায় তিনজন একসাথে ফাঁসিতে ঝুললেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে মেয়ে চাঁদনী আক্তার (৬)। মা শিউলী বেগম ও অপর শিশু সন্তান নুর হোসেন ( ৪) লাশ উদ্ধার করা হয়। রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর সাথে অভিমান করে নিজঘরের ফ্যানের সাথে দুই সন্তানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শিউলী বেগম নিজেও ওই ফ্যানের সাথেই ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। শিশু চাঁদনী আক্তার ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।
৪ আগস্ট ফেনী সদর থানার এলাকার ইতালী প্রবাসী তারেক আহমদের স্ত্রী মর্জিনা আক্তার মুক্তা তার ২ সন্তান তাসলিমা আক্তার (৯) ও মাহিমকে নিয়ে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন। দুপুরে মর্জিনা আক্তার মুক্তা (২৭) দুই সন্তান তাসলিমা আক্তার (৯) মাহিমকে (৫) নিয়ে খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়ে। বিকালে গৃহশিক্ষক শিশুদের পড়াতে এসে ডাকাডাকি করে দরজা না খোলায় বিষয়টি তার ভাই বাহারকে জানালে তিনি তার ছোট ভাই রাহাতকে জানান। এরপর পুলিশকে জানানো হলে থানা পুলিশ দরজা ভেঙ্গে ঘরের ভেতর লাশ দেখতে পায়। প্রবাসী স্বামীর সাথে মনোমালিন্য হয়-এ নিয়ে প্রায়ই মোবাইল ফোনে ঝগড়া হতো। এরই জেরেই মর্জিনা ২ সন্তান নিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করা হয়।
২৮ আগস্ট বরগুনা সদর উপজেলার লেমুয়া গ্রামেলেমুয়া গ্রামের রোমান পঞ্চায়েতের স্ত্রী রোজী আক্তার (২৬) এবং তার দুই শিশু সন্তান মৌমি (৪) ও তায়েবা (২) বিষপানে আত্মহত্যা করে। পারিবারিক কলহের জের ধরে এই আত্মহননের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে বরগুনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এই ঘটনাটিও পারিবারিক কলহের জেরে ঘটে। এদিকে গত ২৩ অক্টোবর রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় শাহানা বেগম নামে এক গৃহবধূ তার ২ শিশু সন্তানসহ বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে দেড় বছরের শিশু আরিয়ান মারা যায়। কন্যাশিশু আগমনী ও তার মা শাহানা বেঁচে যান। সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর মিরপুরে দারুস সালাম এলাকার একটি বাসা থেকে এক নারী ও তার দুই শিশু সন্তানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকালে ছোট দিয়াবাড়ি পানির পাম্পসংলগ্ন ২৯/১ নং টিনশেডের একটি বাসা থেকে ছেলে-মেয়ের গলাকাটা এবং নারীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। দুই সন্তানকে হত্যার পর মা আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। এই তিনজন হলেন- আনিকা (২০), শিশু আবদুল্লাহ (৩) ও শামীমা (৫)।
এ ব্যাপারে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান বলেন, এসব ঘটনা সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে অপমৃত্যু হয়েছেবলে জানাগেছে। প্রায় প্রতিটি ঘটনাই ঘটেছে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বে বা পারিবারিক কলহের জেরে। এসব ক্ষেত্রে পুলিশের খুব একটা কিছু করা থাকে বলে মনে হয় না। তবে এমন ঘটনা তদন্তে কখনো কখনো পরিকল্পিত হত্যা বা আত্মহত্যার প্ররোচনার ঘটনা বেরিয়ে আসে তদন্তে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা বলেন, সামাজিক অবক্ষয় ও অস্থিরতার কারণে এ ধরনের অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ক্ষেত্রে আমরা এ্যাওয়ার্নেসের কাজ করছি। যার যার অবস্থান থেকে প্রত্যেক অবস্থাসম্পন্ন নাগরিককেই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত। এক কথায় এ সব ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হলে এ ধরনের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম