মোদিকে ভয় পেয়ো না, আসছি ২০১৯-এ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সদ্য গতকালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করেছিলেন, মায়ের সঙ্গে প্রাতরাশ করার জন্য ভোরের যোগটি করতে পারেননি। জবাব এল, পদ্মাসনই যিনি করতে পারেন না, তিনি যোগের কিছুই জানেন না। আনন্দবাজার
প্রতিপক্ষ শিবিরের প্রধান নেতা রাহুল গান্ধী যে ভরা সভায় এমন একটি খোঁচা দেবেন, তা হয়তো ভাবেননি খোদ প্রধানমন্ত্রীও। শুধু এই খোঁচার মজাটুকু নয়, নোট-বাতিলের ধাক্কার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ‘জনবেদনা সম্মেলনে’ উপস্থিত দলের হাজার পাঁচেক নেতা-কর্মী আত্মবিশ্বাসে অনেক বেশি টগবগে এক রাহুলকে পেলেন আজ। সঙ্গে পেলেন তার অভয় বার্তার মোদিকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কংগ্রেস তার নিজের পথে চলেই ২০১৯-এ ক্ষমতায় আসবে। মুছে যাবেন অহঙ্কারী ‘জাদুকর’ মোদি। এক তুড়িতে যিনি আমজনতার পকেটের টাকা কাগজ বানিয়ে ছেড়েছেন।
এ দিন সম্মেলনের শুরুতে ও শেষে, দু’বার বললেন রাহুল। দু’বারই বিজেপি দলটিকে নয়, পাখির চোখ করলেন মোদিকেই। ব্যঙ্গে, বিদ্রুপে, শ্লেষে ও কটাক্ষে সমানে বিঁধে গেলেন প্রধানমন্ত্রীকে। কথার ঝাঁজে কখনও নস্যাৎ করলেন প্রধানমন্ত্রী যাবতীয় সাফল্যের দাবি। আবার কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌশলকেই হাতিয়ার করে বোঝাতে চাইলেন, মোদি সকলের থেকে আলাদা শুধু তার অহঙ্কারে। নয়তো দেশ চালাতে সক্ষম অনেক নেতা রয়েছেন বিজেপিতে। মোদির ভাবমূর্তি তছনছ করা, এমনকি নিজের দলেই তাকে একা করে ফেলার লক্ষ্য নিয়েই আজ জনবেদনা সম্মেলনের মঞ্চ দাপালেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি।
না, এদিন তাকে দলের সভাপতি ঘোষণা করা হয়নি আনুষ্ঠানিকভাবে। কিন্তু ভূমিকাটা ছিল তেমনই। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর কৌশলী অনুপস্থিতিতে ‘ব্র্যান্ড রাহুল’ তৈরির মঞ্চ সাজানোই ছিল। মোদির মুখের গ্রাস কেড়ে নেবেন, মনস্থ করেই এসেছিলেন রাহুলও। কখনও মস্করায় কখনও কটাক্ষে, কখনও আবার কথার ঝাঁজে সেটাই করলেন দু’দফায়। এতোদিন মোদি তার বক্তৃতার ধরন নিয়ে ব্যঙ্গ করতেন। আজ ছিল রাহুলের পালা। আতঙ্ক ও বিদ্রুপের খোরাক হয়ে ওঠার পর থেকে প্রিয় যে শব্দটি মোদি এড়িয়ে চলছেন, সেই ‘মিত্রো’ শব্দটি আজ বললেন রাহুল। রীতিমতো মোদিকে ভেঙিয়ে। মোদির ‘অচ্ছে দিন’-এর সেøাগান কেড়ে নিয়ে তাতিয়ে তুলতে চাইলেন কংগ্রেস নেতাদের। রাহুল দাবি করলেন, একমাত্র কংগ্রেসই পারে দেশে সুদিন ফেরাতে। আর সেটি হবে ২০১৯ সালেই। ভারতের মঙ্গলযানে মোদির ছবি না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপের অন্ত নেই বলে কটাক্ষ ছুঁড়েও বিস্তর হাততালি কুড়োলেন রাহুল।
নোট-বাতিলের প্রশ্নে মোদির বিরুদ্ধে বড় আন্দোলনের ডাক দিয়ে রাহুল আসলে এক সঙ্গে অনেকগুলো কাজ সারতে চান।
বক্স আন্দোলনে ফিরিয়ে হতাশ ও ছত্রভঙ্গ সংগঠনকে ফের একসূত্রে গাঁথা ও চাঙ্গা করা। আড়াই বছরের মাথায় মোদির টক্কর নেওয়ার জন্য দলকে তৈরি রাখা। বক্সমোদি যেটাকে তার সব চেয়ে বড় শক্তি বলে মনে করেন, সেটাকেই দেশের বড় বিপদ হিসেবে তুলে ধরা। ধারণাটি হল, তিনিই একা সৎ। একাই লড়ে যাচ্ছেন যাবতীয় দুর্নীতি ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে।
মোদি, তার দল ও সঙ্ঘের মূল দর্শনেই আঘাত হেনে কংগ্রেসের চিরাচরিত ধর্মনিরপেক্ষতা ও সহিষ্ণুতার পথ সম্পর্কে ভারতব্যাপি আবেদন জাগিয়ে তোলা।
কংগ্রেসের প্রতীক ‘হাত’ চিহ্নটিকে রাহুল মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বড় হাতিয়ার হিসেবে তুলে ধরলেন এদিন। তার বক্তব্য, শিবঠাকুর, গুরু নানক, বুদ্ধদেব, মহাবীর প্রত্যেকেই হাত তুলে অভয়-বার্তা দিয়ে গিয়েছেন যুগে যুগে। কংগ্রেসও বলে, ভয় না পেতে। উল্টো দিকে মোদির নীতিই হল ভয় পাওয়ানো। সেটিকে বিদ্বেষ ও রোষে পরিণত করা। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে নোট বাতিল সবই এই ভয় পাওয়ানোর রাজনীতি। সঙ্গে রাহুলের কটাক্ষ, ‘মোদি বলেন, মিত্রো… আপনারা আপনাদের বর্তমান দিন, ১০-১৫ বছরে আমি চকমকে ভারত দেব। কেন? মোদি একাই পারেন, আর অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহ, লালকৃষ্ণ আদবানীরা তেমন স্বপ্নের দেশ দিতে পারেন না!’ কিছু দিন আগে ঠিক এভাবেই কৌশলে বিজেপির অন্দরে মোদিকে একঘরে করতে তৃণমূল নেত্রী মমতা জেটলি, রাজনাথ, আদবানীদের নেতৃত্বে জাতীয় সরকারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। মোদি ডাক দিয়েছিলেন কংগ্রেস-মুক্ত ভারতের। রাহুল আজ বিজেপি-মুক্ত দেশ নয়, ‘মোদি-মুক্ত’ ভারতের রসায়ন তুলে আনলেন মমতার মতো। কমল নাথ বলেন, ‘আমরা মোদি-মুক্ত ভারতের কথা বলছি। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বেই সেটি সম্ভব। কংগ্রেসের সব নেতা-কর্মীকেই এক-এক জন রাহুল হয়ে লড়তে হবে।’ সেই লড়াইয়ের মন্ত্রটিও বলে দিলেন রাহুল, ‘ভয় পাবেন না। মোদি চান মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের সাহায্য করে গরিব, কৃষক, শ্রমিক, আদিবাসীদের ভয় পাইয়ে রাখতে। ভয় না পেয়ে ও সমাজে পাল্টা ঘৃণা না ছড়িয়েই তার বিরুদ্ধে লড়ে যেতে হবে। যতক্ষণ না তিনি উৎখাত হচ্ছেন, ততক্ষণ এই লড়াই চলবে।’
কংগ্রেসের যে কোনো সম্মেলনে মাটিতে বসারই রেওয়াজ ছিল এতোদিন। আজ ছিল চেয়ার। এই বদলই যেন অঘোষিতভাবে রাহুল-জমানা শুরু হওয়ার ইঙ্গিত। দলে রাহুলের ছাপ পড়তে শুরু করেছে এখন থেকেই। ইন্দিরা গান্ধীর পাশেই ঠাঁই পেয়েছেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রীও।
বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘রাহুল তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেই মোদিকে নিশানা করছেন। এখনও তিনি ইসলাম বলতে হজরত আলি বলেন, চন্দ্রযান বলেন মঙ্গলযানকে। সিপাহি বিদ্রোহের সময় ভুল বলেন। আরও হোমওয়ার্ক দরকার এই পার্টটাইম রাজনীতিকের।’ বিজেপি রাহুলকে উপহাসের পাত্র হিসেবে দেখাতে চাইলেও সম্মেলেনে হাততালি ও হর্ষধ্বনির বহর, ফেরার পথে কর্মীদের অনেকের কথাবার্তায় কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট, রাহুলের সেøাগানটা বেশ মনে ধরেছে তাদের। ‘ডরো মাৎ!’ সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ