আল কুরআনের গল্প দান না করায় বাগান পুড়ে ছাই
আমিন আশরাফ: সে অনেক আগের গল্প। ইয়েমেনের এক গাঁয়ের নাম শারওয়ান। সে গাঁয়ে ছিল ফুলে-ফলে ভরা একটি বাগান। অনেক ধরনের গাছ-গাছালির বিশাল বড় বাগানটি যে কারো প্রাণ জুড়িয়ে দিত। বাগানের কর্তা ছিলেন একজন দানশীল বৃদ্ধ। তাঁর নিয়ম ছিল-ফসল তোলার সময় নিজের দরকারি ফসল রেখে বাকিগুলো ফকির-মিসকিন ও অভাবিদের দিয়ে দিতেন।
এমন করে চলছে সে দানবীরের দিনকাল। একদিন তিনি অসুস্থ হলেন। খুব অসুস্থ। তিনি বুুঝতে পারেন-তাঁর চলে যাওয়ার সময় এসে গেছে। বৃদ্ধ লোকটি তাঁর কলিজার টুকরা সন্তানদের ডেকে অনেক অনেক ভালো ভালো কথা বলেন, চমৎকার সব উপদেশ দেন। জীবনের শেষ সময়ে এসে তিনি এ কথাটিও বলতে ভুলে যান নি, ‘তোমরা গরিবদের দান করতে কখনো ভুলো না। তারা যেন তোমাদের কাছে এসে খালি হাতে ফিরে না যায়।
তারপর সে বৃদ্ধ চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ঠাঁই নিলেন মহান আল্লাহর দরবারে। বাবার মারা যাবার পর বাগানের মালিকানা পেল তাঁর সন্তানেরা। তবে তারা খুব তাড়াতাড়ি বাবার উপদেশে কথা ভুলে যায়। তাদের একজন ছাড়া সবাই সিদ্ধান্ত নেয়, গরিবদের দান করে পয়সা নষ্ট করার কী দরকার। তারা কখনো গরিবদের কিচ্ছু দেবে না।
তারপর ফসল তোলার সময় ঘনিয়ে এলো। নিজেদের মধ্যে শলা-পরামর্শ করে, খুব সকাল সকাল বাগানের সব ফসল তারা তোলে নেবে, যাতে গরিবরা কোনো কিছু টের পাওয়ার আগেই তারা সব ফসল নিয়ে কেটে পড়তে পারে।
বাগান মালিকদের এ পরামর্শ গরিবরা তো আর জানে! তো তারা প্রতি বছরের মতো দানের ফসল নিতে এলো। কিন্তু বাগানে এসে কাউকে না পেয়ে তারা মন খারাপ করে চলে গেল। বাগান মালিকদের এমন আচরণে মহান আল্লাহ খুব রাগ করেন, অনেক রাগ। একরাতে তিনি ওই বাগানের একটি ভয়াবহ ঝড় পাঠালেন। ঝড়ের ও বজ্রপাতে বাগানে আগুন ধরে যায়, আগুনের তীব্রতায় বাগানের সব গাছ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ওদিকে বাগান মালিকরা খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে একে অপরকে ডাকতে লাগলে। সবাই ওঠার পর তারা একসঙ্গে ফল সংগ্রহের জন্য বাগানের দিকে রওনা হলো। কিন্তু তারা জানতো না যে, ঝড় ও বজ্রপাতের আঘাতে রাতেই বাগানটি জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তারা খুব সতর্কতার সঙ্গে বাগানের দিকে এগিয়ে চলল। তাদের একজন ফিসফিস করে বলল, সতর্ক থাকবে আজ যেন একজন ফকিরও বাগানে না আসতে পারে।
বাগান মালিকরা যখন বাগানে গিয়ে দেখে, আগুনের হলকা লেগে পুরো বাগানটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ অবস্থা দেখে তারা হতভম্ব হয়ে গেল। ভাষা হারিয়ে তারা বোবার মতো এদি-ওদিক তাকাতে লাগলো। অনেকক্ষণ কেউ কোনো কথা বলে না। তাদের একজন বলে, আমরা মনে হয় ভুল করে অন্য কারো বাগানে এসে পড়েছি। কিন্তু তাদের বড়ভাই বলল, আমি কি তোমাদের আল্লাহর গুণগান করতে এবং গরিবদের ফসল দিতে বলি নি? এখন বুঝ অতিরিক্ত লোভ করলে, গরিবদের প্রাপ্য না দিয়ে তোমাদের কী পরিণতি হয়?
বড় ভাইয়ের কথা শুনে সবাই ভালো অনুধাবন করলো, তারা অনেক বড় অপরাধ করেছে; নিজেদের ওপর নিজেরাই অন্যায় করেছে এবং সীমালঙ্গন করেছে।
এরপর তারা কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করল। নিজেদের ভুল স্বীকার করে মহান আল্লাহর কাছে তারা ক্ষমা চাইলো। তারা অঙ্গীকার করে তাদেরকে একটি বাগান দেওয়া হলে তারা গরীবদের সাধ্যমত দান করবে, ফসল দেবে। মহান আল্লাহ তাদের অন্যায় ক্ষমা করে দেন। ক্ষমা চাওয়ার বিনিময়ে তাদের চমৎকার বাগান দান করলেন। সূত্র: সুরা আলম কলম, আয়াত: ১৭-৩৩]