রাফসানজানির শেষ যাত্রায়ও ছিল রাজনৈতিক বিভেদ
নূসরাত জাহান : ২০০৯ সালে ইরানে বিরোধীদের ‘গ্রিন মুভমেন্ট’ কর্মসূচিতে একসঙ্গে লাখ লাখে মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। ওই ঘটনার পর তেহরানের রাস্তায় একসঙ্গে এতো মানুষ আর দেখা যায়নি। আট বছর পর ফের তেহরানের রাস্তায় আবার লাখ লাখ মানুষের ঢল নেমেছিল। তবে তখনকার কারণ আর এবারের কারণ ভিন্ন। এবার রাস্তায় লাখ লাখ মানুষ নেমেছিল আকবর হাশেমি রাফসানজানির জন্য। তার দাফন যাত্রায় সামিল হতে তেহরানের রাস্তায় নেমেছিল প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। প্রিয় নেতার শেষ বিদায়ে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু কট্টরপন্থী ও উদারপন্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভেদ ছিল স্পষ্ট। এটা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামির আহ্বানে রাফসানজানির দাফন যাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন। বিরোধীদের সংস্কার মুভমেন্টের প্রতি সমর্থন দেখাতেই তাদের এ যোগদান।
‘দীর্ঘজীবী হও খাতামি, দীর্ঘজীবী হও রুহানি এবং হাশেরি তোমার আত্মা শান্তিতে থাকুক’ এমন বলে অনেকে স্লোগান দিচ্ছিল। রাফসানজানি হামেশি নামেই বেশি পরিচিত। এছাড়া নানা লেখা সম্বলিত প্লাকার্ডও বহন করতে দেখা গেছে। এসব প্লাকার্ডে যেসব কথা লেখা ছিল তা দিয়ে রাফসানজানির সঙ্গে উদারপন্থী ও সংস্কারবাদীদের সম্পর্কের কথাই বোঝানো হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাফসানজানির সঙ্গে কট্টরপন্থী রাজনীতিকদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল।
রাফসানজানি ১৯৭৯ সালের ইরানে ইসলামি বিপ্লবের অন্যতম নেতা বিবেচনা করা হলেও তিনি ছিলেন বাস্তববাদী রক্ষণশীল। পশ্চিমাদের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৮৯-১৯৯৭ সাল পর্যন্ত রাফসানজানি ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাহমুদ আহমাদিনেজাদের কাছে হেরে যান। ২০১৩ সালেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন রাফসানজানি। কিন্তু তাকে অযোগ্য প্রার্থী ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ৮ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। আশির দশক থেকেই ইরানের রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন রাফসানজানি। সূত্র: বিবিসি।