আফগানিস্তান নিয়ে নতুন খেলায় বিশ্ব নেতারা
নূসরাত জাহান: তালেবানের সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে আফগানিস্তানে শক্তিশালী দেশগুলোর অবস্থান শক্ত করাকে ‘গ্রেট গেম’ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ ভৌগলিকভাবে আফগানিস্তান যে অবস্থানে রয়েছে তা সব দেশের জন্যই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাইতো এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা সব দেশই আফগানিস্তানে তাদের অবস্থান দৃঢ় করতে চায়। সেজন্য প্রয়োজনে তারা তালেবানের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতেও ভুল করে না।
২০০১ সালে তালেবান ও আল-কায়েদা উচ্ছেদ করতে আফগানিস্তানের অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন মার্কিন বাহিনী। ১৫ বছর পার হলেও আফগানিস্তান থেকে পাট চুকায়নি যুক্তরাষ্ট্র। অল্প কিছু সেনা প্রত্যাহার করলেও নিরাপত্তা অজুহাত দেখিয়ে সেখানে মার্কিন বাহিনী রয়ে গেছে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের অবস্থান ধরে রাখা। উনবিংশ শতকে এ এলাকায় দখলদারের ভূমিকায় ছিল ব্রিটিশরা। এরপর বিংশ শতকে আফগানিস্তান ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের আয়ত্তে। যুক্তরাষ্ট্রের কারসাজিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে হয় খান খান। তারপরও রাশিয়ার সঙ্গে আফগানিস্তানের মিত্রতা ছিল। তবে সন্দেহ আর অনাস্থাই এখন পর্যন্ত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা আনতে দেয়নি। এ দেশটির কৌশলগত অবস্থানও আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করে রাখার অন্যতম প্রধান কারণ।
ধারণা করা হয়, আফগান তালেবানের অন্যতম বড় সমর্থক পাকিস্তান। তাদের রয়েছে দ্বিমুখী ভূমিকা। একদিকে তারা তালেবানকে সাহায্য করছে। যাতে করে আফগানিস্তান অস্থিতিশীল থাকে। কারণ আখেরে তাদেরই লাভ হবে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে তালেবান বিরোধী লড়াইয়ে তাদের সাহায্য করে বিরাট অংকের টাকা পুরছে পকেটে। এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে তালেবানের সঙ্গে ইরানের ভালো সখ্যতা রয়েছে বলে জানিয়েছে আফগান ও পশ্চিমা কর্মকর্তারা। এমনকি তালেবান সোর্সও ইরানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছে। সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছে তালেবানের।
গত ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের নিযুক্ত মার্কিন কমান্ডার জেনারেল জন নিকোলসন রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে তালেবানের যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তারা আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা আনতে, জঙ্গিদের উৎখাত এবং মাদক ব্যবসা রুখতেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গত ১৫ বছরে তারা কিছুই করতে পারেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অঞ্চলে আধিপত্য ধরে রাখতে সবাই তালেবানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এর পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যেমন, আফগানিস্তানের কথিত ইসলামিক স্টেটের উত্থান, নতুন আফগান সরকারের নীতি পরিবর্তন এবং রাশিয়া, চীন, ইরান ও পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন তৈরি হওয়া।
আইএস-এর উত্থানের পর আফগানিস্তানের সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের যেসব এলাকায় সীমান্ত রয়েছে সেখানে সেনা উপস্থিতি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি তারা তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগও বাড়িয়েছে। রাশিয়া, ইরান, চীনের দাবি, এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা আইএসের জন্ম দিয়েছে। সূত্র: বিবিসি। এফএ। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী