ডিজিটাল কারচুপিতে মানুষ তটস্থ, ইভিএম চালু হলে বড় দুর্নীতি হবে : রিজভী
ডেস্ক রিপোর্র্ট : বতর্মান সংসদের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন ও ই-ভোটিংয়ের পুরোপুরি বিরুদ্ধে বিএনপি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
গতকাল শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি বিএনপির এই অবস্থানের কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনার সংসদ একতরফা পার্লামেন্ট। আপনি নিজের মতো করে যদি আইন করেন তাহলে তো সব দলের সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন কমিশন গঠন হবে না। আপনি কী আইন করবেন সেটা নিয়ে মানুষের মনে বিরাট সন্দেহ আছে। আপনার প্রত্যেকটি আইন হচ্ছে গণ-বিরোধী, লুটপাটের পক্ষে, দুর্নীতির পক্ষে।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, সব দলের মতামতের ভিত্তিতে একটি সার্চ কমিটি করে, সেই সার্চ কমিটি সব দলের মতামত নিয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। যার আভাস, যার সুস্পষ্ট বক্তব্য ১৩ দফায় আমাদের দলের পক্ষ থেকে চেয়ারপারসন বলেছেন, সেটিকে বিবেচনায় নিয়ে করুন। তার সঙ্গে যদি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করার জন্য আরও কিছু উপাদান করার প্রয়োজন হয়, যুক্ত হতে পারে।
সরকারকে সর্তক করে দিয়ে রিজভী বলেন, সবার মতামতের বাইরে গিয়ে আপনাদের একক মনোভাব, আপনাদের পছন্দসই লোকদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, সেই ধরনের পরামর্শ রাষ্ট্রপতিকে দেবেন অথবা আইন প্রণয়ন করবেন, এটি জাতি কোনোদিন মেনে নেবে না। নতুন নির্বাচন কমিশনের যারা অধিকর্তা হবেন, তাদের প্রতি যেমন আওয়ামী লীগেরও আস্থা থাকতে হবে, তেমনি বিএনপিরও আস্থা থাকতে হবে, ২০ দলীয় জোটেরও আস্থা থাকতে হবে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও আস্থা থাকতে হবে। আর সেই আস্থা না থাকলে একতরফা নির্বাচন কমিশন গঠন হলে এটি কেউ মেনে নেবে না।
ই-ভোটিং চালুর বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ইভিএম অনেক ত্রুটি থাকতে পারে বলে ত্যাগ করতে হয়েছিল। এমনিতেই সারা বাংলাদেশে ডিজিটাল কারচুপির জন্য সব জায়গার মানুষ তটস্থ এবং দুর্নীতির একটি নতুন মাত্রা দেওয়া হয়েছে ডিজিটাল কারচুপিতে। আর ইভিএম চালু করলে আরেকটি দুর্নীতি হবে। ভোট ডাকাতি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, রাত তিনটার সময় ব্যালট বাক্স উধাও, ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের যাওয়ার পরিবর্তে সেখানে অন্য প্রাণীদের যাতায়াত ইত্যাদি সব কিছু আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ স্টাইল দিয়েছে। আরেকটি স্টাইল হচ্ছেÑ ফেনী স্টাইলের নির্বাচন। অর্থাৎ কোনো প্রতিপক্ষ থাকবে না, নিজেরাই থাকবেন, নিজেরাই ভোট দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন উনি বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। আমি বলতে চাই, আজকে আমরা একটা মিথ্যাচারে বসবাস করছি। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের রাজকোষ থেকে ৮০০ কোটি টাকা উধাও, আমরা দেখেছি, পূঁজিবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও। মহাসড়ক-সেতু-ব্রিজ-ফ্লাইওভারের উন্নয়ন ব্যয় তিন-চারগুন বাড়ছে। এ হচ্ছে শেখ হাসিনার উন্নতি। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে ১৫-২৯ বছরের বয়সী যারা, যারা পরিশ্রম করবে, কাজ করবে-এই বয়সী ছেলে- মেয়েরা আজ বেকার। পত্রিকায় সংবাদ এসেছে- এক কোটি ১০ লাখ শিক্ষিত যারা মাস্টার ডিগ্রি, তারা বেকার। প্রধানমন্ত্রীর এই হচ্ছে উন্নয়ন। মানুষের উন্নয়ন হয়নি, হয়েছে লুটপাট ও অর্থ আত্মসাতের উন্নয়ন। উনি উন্নয়নের মহাসড়কে নয়, দুর্নীতির উন্নয়নের মহাসড়কে দেশকে নিয়ে গেছেন।
এতে সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জাগপার সহ-সভাপতি রেহানা প্রধান, মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুর রহমান খান, সহ-সভাপতি আবু মোজাফফর মোহাম্মদ আনাছ, জাগপা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রুবেল প্রমুখ বক্তব্য দেন। সম্পাদনা : মাসুম বিল্লাহ