দুই সিটি মেয়রের কঠোর পদক্ষেপের পরও দখলমুক্ত হচ্ছে না ফুটপাত
সাইদ রিপন: ঢাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করতে শুধু হকাররাই নয়, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও বড় বাধা। ২০১৫ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দুই সিটি মেয়রদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে ফুটপাত দখলমুক্ত করা। এ নিয়ে দুই মেয়রের সাথে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তারা ফুটপাত হকারমুক্ত করার ঘোষণা দেন। তবে এ কাজ করতে গিয়ে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ ক্ষমতাশীল দলের সহযোগী সংগঠনের বাধার সম্মুখীনও হতে হচ্ছে। যার ফলে উচ্ছেদ করার পর আবার নতুনভাবে গড়ে উঠছে হকারদের দোকান।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ক্ষমতাসীন দল, সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর বেশ কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নেন। এ কারণেই উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টা পর, হকাররা আবার ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে তাদের ব্যবসা শুরু করে। তিনি বলেন, স্থানীয় নেতা এবং পুলিশের চাঁদাবাজির দৌরাত্ম শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব হবে না। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, চাঁদাবাজ বা লাইনম্যানরা গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, ফার্মগেট, নিউ মার্কেট, গুলশান, মিরপুর ১ ও ১০ নম্বর, মহাখালী ও উত্তরা এলাকায় বসা হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত টোল আদায় করেন। মিরপুর ১০নম্বর এলাকায় ফুটপাতে পোশাক বিক্রি করেন শহীদুল। তিনি বলেন, ফুটপাতে ব্যবসা করতে হলে প্রত্যেক হকারকেই ২-৩ লাখ পর্যন্ত টাকা দিতে হয়। এরপর দৈনিক ১০০-৫০০ টাকা টোল দিতে হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সূত্র জানিয়েছে, গুলিস্থান এবং আশেপাশের এলাকায় পাঁচ হাজার হকার রয়েছেন। এসব দোকান থেকে দৈনিক গড়ে ৩০০ টাকা নিলেও লাইনম্যান প্রতিদিন ১৫ লাখ টাকা তোলেন।
ফার্মগেট এলাকার আইবিএ হোস্টেল থেকে টি অ্যান্ড টি এলাকা পর্যন্ত টোল তোলার দায়িত্বে আছেন শাহ আলম নামে এক লাইনম্যান। তিনি যুবলীগ ও ফার্মগেট হকার্স ওয়েলফেয়ার সংস্থার সেক্রেটারি।
ফার্মগেট এলাকার এক হকার বলেন, লাইনম্যানরা কোন দলের সেটা আসলে কোনো বিষয় নয়। কারণ, যারাই ক্ষমতায় থাকবে তখন ওই দলের নেতারাই টোল তুলবেন।
তেজগাঁও কলেজের কাছে হকারি করেন জলিল। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শাহ আলম ও তার লোকজন প্রতিদিন হকারদের কাছ থেকে টোল আদায় করেন। এ বিষয়ে জানতে শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ কাজে পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সব পুলিশ নির্দোষ নয়। তবে বিষয়টি উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রয়েছে। এ কাজে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্পাদনা: এনামুল হক