বন্ডের সুতা খোলা বাজারে, মার খাচ্ছে দেশিয় সুতা
নুরুল আজিজ চৌধুরী ও হাবিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ: দেশের বৃহত্তম পাইকারি মোকাম নারায়ণগঞ্জের টানবাজরে সুতার দাম গত দেড় মাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় স্পিনিং মিলগুলো সুতার মোকাম গড়ে তোলায় টানবাজারের ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা করে ব্যবসায় টিকে থাকতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের মৌসুম শুরু হওয়ায় বেচাকেনা বেশ ভালো। তবে বন্ডের সুতার কারণে দেশিয় সুতার বাজার বারবার মার খাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
সুতার বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১০ কাউন্টের সুতা প্রকার ভেদে বেচাকেনা হচ্ছে ৩৭ টাকা থেকে ৪০ টাকা দরে। আবার কোয়ালিটির দিক থেকে বেশ উন্নত ১০ কাউন্টের সুতা দাম এক টাকা বাড়লে আবার দুই/চার দিন পর দাম কমে যাচ্ছে ৫০ পয়সা। ২০ কাউন্টের সুতা বেচাকেনা হচ্ছে প্রকার ভেদে ৫২ টাকা থেকে ৫৬ টাকা। দুই মাস আগেও এই সুতার দাম বেচাকেনা হয়েছে ৫৪ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে। সে হিসেবে পাউন্ড প্রতি সুতার দাম কমেছে ২ থেকে ৪ টাকা।
৩০ কাউন্টের সুতা বেচাকেনা হচ্ছে (বিভিন্ন কোয়ালিটির) পাউন্ড প্রতি ৮১ টাকা থেকে ৮৬ টাকা দরে। গত দেড় মাস ধরে একই দরে সুতা বেচাকেনা হচ্ছে। ৪০ কাউন্টের সুতা বেচাকেনা হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১১৬ টাকা দরে। এই কাউন্টের সুতার দাম প্রায় দুই মাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। ৫০ কাউন্টের সুতা বিভিন্ন স্পিনিং মিলের সুতার দর ১৩২ টাকা থেকে ১৩৪ টাকা। এই সুতার বাজার দর সপ্তাহে এক টাকা বাড়লে আবার দুই দিন পর এক বা দুই টাকা কমে যাচ্ছে। ৬০ কাউন্টের সুতা বেচাকেনা ১৫৬ টাকা থেকে ১৬০ টাকা। ভারতীয় সুতা বেচাকেনা হচ্ছে ১৮০ দরে। ৮০ কাউন্টের সুতা বেচাকেনা হচ্ছে ২০২ টাকা থেকে ২০৬ টাকা দরে। এই কাউন্টের সুতা গত দুই মাস ধরে একই দামে বেচাকেনা হচ্ছে। যদিও এই সুতার কাউন্ট গত আড়াইমাস আগে বেচাকেনা হয়েছে ২২০ টাকা দরে। সে হিসেবে পাউন্ড প্রতি দাম কমেছে প্রায় ১৮ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, নারায়ণগঞ্জের টানবাজারের সুতার বাজারের সেই রমরমা ব্যবসা নেই। কারণ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন সুতার মোকাম গড়ে উঠায় টানবাজারের ব্যবসায়ীদেরর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসায় টিকে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, নরসিংদীর মধাবধীদে সুতার নতুন মোকাম গড়ে উঠায় ওই এলাকার ক্রেতারা নারায়ণগঞ্জ আসছে না। কারণে তারা ঘরে বসে সুতা পাচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি স্পিনিং কোম্পানি সরাসরি সুতা বিক্রি করার জন্য শো-রুম খুলে বসেছে। মিল রেইটে তারা পণ্য পাচ্ছে। এ কারণে তারা আর নারায়ণগঞ্জে আসছে না। ফলে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ক্রেতা ধরার জন্য ওইসব এলাকায় নানা কৌশল অবলম্বন গ্রহণ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আলহাজ নিসারউদ্দিন কামাল জানান, টানবাজারের সুতার ব্যবসা এক সময় খুব চাহিদা ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সুতার মোকাম গড়ে উঠায় টানবাজারের ব্যবসায় কিছুটা মন্দা নেমে এসেছে। তবে ব্যবসার ধরন আগে থেকে অনেক পাল্টেছে। আগে ক্রেতারা টানবাজারে এসে (কমিশন এজেন্ট) বা মধ্যসত্তভোগিদের মাধ্যমে দর যাচাই বাছাই করে সুতা কিনত। কিন্তু এখন দুরাঞ্চলের ক্রেতারা নারায়ণগঞ্জে না এসে টেলিফোনে সুতার অর্ডার দিচ্ছে। আর টাকা পরিশোধ করছে ব্যাংকে মাধ্যমে। তিনি দাবি করেন গত কয়েকদিন ধরে সুতার বেচাকেনা ভালো যাচ্ছে। দামও স্থিতিশীল আছে। কাউন্ট প্রতি সুতার দাম সপ্তাহে এক টাকা বাড়ালে আবার দুই তিন দিন পরই কমে যাচ্ছে।
এন এম ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী সমীন ভদ্র জানান, টানবাজারের সুতা বিক্রির সবচেয়ে বড় ক্রেতা হচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী, মাবধদী, আড়াইহাজার গোপলদীসহ। কিন্তু বিভিন্ন স্পিনিং মিল মালিক ক্রেতা আকর্ষণের জন্য পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মাধবদীসহ বিভিন্ন এলাকায় শো-রুম দিয়েছে। তারা টানবাজারের রেটের চেয়ে কিছুটা কম রেটে অর্থাৎ মিল গেটের রেটে সুতা বেচাকেনা করছে। ফলে তাঁতিরা টানবাজার না এসে ওইসব শো-রুম থেকে পণ্য সরবরাহ করছে। তিনি বলেন, আগে তাঁতিরা টানবাজার এসে দুই তিনটি ঘর যাচাই বাছাই করে সুতা কিনত। কিন্তু এখন পাইকাররা নারায়ণগঞ্জে না এসে টেলিফোনে সুতার অর্ডার দিচ্ছে। আর এভাবেই চলছে টানবাজারের সুতা বেচাকেনা।
শীত মৌসুম চলে আসায় তাঁতিরা শীতের পোশাক তৈরির জন্য মোটা কাপড় বুনছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজরে তুলার দাম পাউন্ড প্রতি দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। ভারতীয় তুলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা থেকে ৭৮ টাকা। আগে একই তুলা বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকা। তিনি বলেন, তুলার বাজার বৃদ্ধি পাওয়ায় সুতার বাজার বেড়েছে।
টানবাজারের ব্যবসায়ীরা মূলত বিভিন্ন স্পিনিং মিলের সুতা বেচাকেনা করে থাকে। কিন্তু মিলগুলো সরাসরি ক্রেতা প্রধান এলাকায় শো-রুম খুলে ব্যবসা করায় আমাদের কিছুটা বিপাকে পড়তে হয়েছে। অন্যদিকে বন্ডের সুতা খোলা বাজারে চলে আসায় দেশিয় সুতা মার খাচ্ছে। বন্ডের সুতা খোলা বাজারে বেচাকেনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বন্ডের সুতা খোলা বাজারে এনে বিক্রি করে দিচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বারবার অবহিত করা হলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সম্পাদনা: এনামুল হক