সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে সম্প্রসারণশীল অর্থনীতি সম্ভব নয় : ফরাস উদ্দিন
জাফর আহমদ: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেছেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে সম্প্রসারণমূলক অর্থনীতি সম্ভব নয়। দেশের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে দেশে রেমিটেন্স কমেছে; আশানুরূপ রপ্তানি আয় বাড়ছে না। একই পণ্য রপ্তানি করে ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ বেশি আয় করছে। একই আয় করে ফিলিপাইন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী শ্রমিকরা বেশি অর্র্থ দেশে পাঠাতে পারছে; বাংলাদেশের শ্রমিকরা তা করতে পারছে না।
গতকাল ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি মিলনায়তনে যুব অর্থনীতিবিদ সমিতি আয়োজিত ‘আগামী দিনের অর্থনীতি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান। সমিতির সভাপতি বদরুল মুনিরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমএম শহীদুল হাসান, সমিতির সাধারণ সম্পাদক একেএম কামরুল আহসান প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, অর্থনীতির অগ্রগতির পরিমাপে গুরুত্বপূর্ণ মানদ- সূচকে আস্থা সাম্প্রতিক বাংলাদেশে ৬৬ দশমিক ৪ ভাগ উঠে এসেছে। কয়েক বছর আগেও এ অবস্থা ছিল না। মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজের ফলে এ উন্নতি হয়েছে। এ সময়ে দেশে যেমন বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে উৎপাদন ও ভোগ। সম্প্রসারণশীল মুদ্রানীতি গ্রহণ করা হলে প্রবাসী শ্রমিকদের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর হাতে আরও বেশি পরিমাণ অর্থ যাবে। এর ফলে এখন যে পরিমাণ ভোগ হচ্ছে তার হার আরও বাড়বে।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দেশে ৪৪ বছরে জাতীয় আয় বেড়েছে ১৭৪ গুণ। মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮২ গুণ। ১৯৭২ সালে দেশে মাথাপিছু আয় ছিল ১৭৭ মার্কিন ডলার বা ৬৮৭ টাকা। বর্তমান মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১,৪৬৬ মার্কিন ডলার। টাকার অংকে যার পরিমাণ প্রায় ১,০২,৮২৬ টাকা। একই সময়ে জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। স্বাধীনতার পর দেশে গড় আয়ুর ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। ১৯৭২ সালে ভারতীয়দের চেয়ে ৩ বছর কম গড় আয়ু ছিল। এখন ভারতের চেয়ে তিন বছরে বেশি হয়েছে। এ সবই হয়েছে প্রগতিশীল নীতি কৌশল গ্রহণের কারণে।
তিনি বলেন, দেশে দারিদ্র্য কমেছে উল্লেখ্যযোগ্য হারে। ১৯৭২ সালে দারিদ্র সীমার নিচে মানুষের হার ছিল ৮০ ভাগ। তখন সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মধ্যে সাড়ে ছয় কোটি মানুষ দরিদ্র ছিল। এখন দরিদ্র মানুষের হার নেমেছে ২২ শতাংশে। অর্থাৎ ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ কোটি ৭৪ লাখ মানুষ দরিদ্র। ১৯৭২ সালে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নারীর অংশগ্রহণ ছিল মাত্র তিন ভাগ। ২০১৭ সালের শুরুতে এ হার দাঁড়িয়েছে ৩৯ ভাগে। সকল সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে।
বাংলাদেশের অগ্রগতির সাফল্যের অন্যতম কারণে হলো বিশ্বনন্দিত কৃষিনীতি। ১৯৭২ সালের কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়ার ধারা বর্তমান সরকারের সময়ে অব্যাহত রাখার কারণে দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে কৃষি ভূমিকা রাখছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সম্পাদনা: এনামুল হক