আইএস’র ১১ টি হামলার দায় স্বীকার বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বাড়ার আশঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে নেই
আজাদ হোসেন সুমন ও আনিসুর রহমান তপন: যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান জেমস ক্ল্যাপার মনে করেন বাংলাদেশে আরও জঙ্গি তৎপরতা বাড়তে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ ধরনের সম্ভাবনার কথা নাকচ করেছেন।
গত সপ্তায় ‘বৈশ্বিক হুমকি’ নিয়ে মার্কিন সিনেটের এক অনুষ্ঠানে দেয়া লিখিত বক্তব্যে জেমস ক্ল্যাপার জানান,‘বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর চালানো ১১টি গুরুতর হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট বা আইএস। এছাড়া ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও আল-কায়েদা বাংলাদেশের অন্তত ১১ জন প্রগতিশীল লেখক ও ব্লগারকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। অথচ এরপরেও শেখ হাসিনার সরকার এ সব ঘটনায় আইএস-এর সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে এবং এ সমস্ত সহিংসতার জন্য ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল ও বিরোধী দলকে দায়ী করেছে’। হামলার আশঙ্কা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে, জঙ্গিবাদে কারা জড়িত, কেন জড়িত এবং এসব জঙ্গিবাদের উস্কানিদাতা ও মদথদাতা কারা সেটা সবাই জানে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, আমাদের দেশ এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জনগণ জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে এখন অনেক বেশি সচেতন। তারা এসব জঙ্গির বিরুদ্ধেও এখন সতর্ক রয়েছে। আমাদের জনগণ বুঝতে পারছে এর পিছনে কাদের সংশ্লিষ্টতা আছে। একারণে জনগণ যেহেতু বুঝতে পারছে, তাই আমি মনে করি না ভবিষতে এ দেশে আর কোনো বড় ধরনের নাশকতা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। সেটা বন্ধ করে বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং বাংলাদেশের কণ্ঠরোধ করতে আন্তর্জাতিকভাবে দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্ত চলছে। এসবের অংশ হিসেবেই এদেশে বিবাদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নানা ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা জানি এসব ষড়যন্ত্র চলবেই। তবে ষড়যন্ত্রের অংশ জঙ্গিবাদকে আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা অনুমান করছি কিছু নারী জঙ্গি তো তৈরি হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু ধরা পড়েছে। আবার কিছু নারী জঙ্গি নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে জঙ্গিবাদের ছায়া থেকে বের হয়ে এসে জঙ্গিবাদের কার্যকলাপ বন্ধ করে দিয়েছে এভাবেই আছে।।
এর বাইরেও আরও কোনো সক্রিয় নারী জঙ্গি আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তেমন কোনো ইনফরমেশন নেই। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এতে যদি এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় তবে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিব বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, বাংলাদেশে এখন জঙ্গি তৎপরতা নেই বললেই চলে-কারণ গুলশান হামলার পর পুলিশের নানা অভিযানে মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি মেজর জাহিদ, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী, তানভীর কাদেরী, নূরুল ইসলাম মারজানসহ কমপক্ষে ১৩জন নিহত হয়েছে। আত্মসমর্পণ ও গ্রেফতার হয়েছে ৪ নারীসহ কমপক্ষে দেড় ডজন জঙ্গি। যার মধ্যে কেউ কেউ আত্মঘাতী স্কোয়াডেরও সদস্য। পুলিশের কাউন্টার অ্যাটাকে উল্লেখিতরা নিহত না হলেও এবং বাকিরা আত্মসমর্পণ ও গ্রেফতার না হলে এরা নাশকতা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হতো। কিন্তু এখন আপাতত আর সেই সম্ভাবনা নাই।
মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের বক্তব্যের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, টুইন টাওয়ারে ওয়ান ইলেভেনের জঙ্গি হামলার কথা কি মার্কিনিরা আগাম জানতে পেরেছিলেন এ প্রশ্ন করে আইজিপি বলেন, এছাড়াও তুরস্ক, জার্মানি, বৃটেন ফ্রান্সসহ বিশ্বের তাবৎ উন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন সময় জঙ্গি হামলা হয়েছে এবং হচ্ছে সেটা কি তারা আগাম জানতে পেরেছেন? যদি তাই হয়, তাহলে শুধু বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এ প্রশ্ন কেন। তিনি বলেন, জঙ্গি হামলার ঘটনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়-আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্যরা বড় ধরনের নাশকতাগুলোতে অংশ নেয়। আর আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্যদের ব্যাপারে আগাম তথ্য সংগ্রহ করা বা ঠেকানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে মনে হয় না। কারণ গত ৬ মাসে দেশ থেকে ৯০ ভাগ জঙ্গি আমরা দমন করতে সক্ষম হয়েছি। যা এদেশের মানুষের পাশাপাশি বহির্বিশ্বেও স্বীকৃত। তিনি বলেন, ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা একটি কমিটমেন্ট নিয়ে মাঠে নামে। কমিটমেন্ট অনুযায়ী পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এ পর্যন্ত প্রায় সব জঙ্গিকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। জঙ্গিবিরোধী অভিযান সফল করতে গিয়ে পুলিশ বাহিনীর বেশকিছু সদস্য নিহত এবং আহত হয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে পুলিশ আরও গভীরে ঢুকছে। তারপরও যদি বিচ্ছিন্নভাবে কোনো ঘটনা ঘটে সেটা কঠোরভাবে মোকাবিলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে আইজিপি বলেন, তবে এখানে জঙ্গিবাদের স্থান নেই। দেশের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা নিয়ে আমরা জঙ্গি দমনে কাজ করছি-যাতে তারা আর কোনোদিন এই ভূখন্ডে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। সম্পাদনা: এনামুল হক